গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তাই নগরের তাপমাত্রা নিরসনে ঢাকায় দুই লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
বুধবার (৩ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ডিএনসিসি ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাডিয়েশন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের সমঝোতা চুক্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা জানান তিনি।
মেয়র বলেন, ‘ঢাকা শহরের তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দাবদাহের ফলে শহরের মানুষের জীবন-জীবিকা আজ হুমকিতে। মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। শ্রমজীবী মানুষের কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আমি আশা করছি, ডিএনসিসি এবং আরশট-রকের যৌথ উদ্যোগ তামমাত্রা কমানোর মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও শীতল ঢাকা গড়তে সক্ষম হব।’
এ সময় তিনি উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় চলতি বর্ষা মৌসুমে দুই লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দেন।
গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, ‘গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় ডিএনসিসি এলাকায় তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এই চরম তাপ পরিস্থিতি নগরবাসীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং শহরের বার্ষিক উৎপাদনের প্রায় ৮ শতাংশেরও বেশি শ্রম উৎপাদনশীলতা কমছে।’
তারা আরও বলেন, ‘গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে তাপপ্রবাহ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়নের বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শহর এলাকায় বসবাসকারী মানুষ। তীব্র তাপপ্রবাহ শহরগুলোর জন্য বেশি বিপজ্জনক এবং প্রতি বছর শহরে ঝুঁকি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।’
‘তাই ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা উত্তর সিটিতে এশিয়ার প্রথম শহর হিসেবে বুশরা আফরিনকে চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঢাকা উত্তরকে নিরাপদ করার জন্য নেতৃত্বে দেবেন। তাপমাত্রা কমাতে তিনি শহরব্যাপী নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। ঢাকা উত্তরের জনগণের মধ্যে তাপ সচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষা প্রচেষ্টা ত্বরান্বিতকরণসহ নতুন নতুন কাজ করবেন,’ যোগ করেন তারা।
এ সময় বুশরা আফরিন বলেন, ‘আমরা শহরের প্রচণ্ড তাপ থেকে মানুষ ও সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিভিন্ন শহরের নেতাদের এবং বিশেষজ্ঞদের একটি বৈশ্বিক সংগঠনে যোগ দিতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। ঢাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে আমি জানি, তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের বিকল্প নেই। ঢাকা শহরে তাপমাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিশেষ করে স্বল্পআয়ের শ্রমজীবী মানুষ, বস্তিবাসী, অভিবাসী এবং নারী ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
আরশট-রকের পরিচালক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথি বাঘম্যান ম্যাকলিওড বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহ সারাবিশ্বের শহরগুলোতে একটি প্রেসার কুকারের মতো কাজ করছে এবং ঢাকার উত্তরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানে ঝুঁকি আরও বেশি। তাই ঢাকা উত্তরে একজন চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে এ শহরে নানা পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বুশরা আফরিনের ভূমিকা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় শহরগুলোর জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে। আরশট-রক ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং আরশট-রক ফাউন্ডেশন ডিএনসিসির মানুষের সুরক্ষায় সম্ভাব্য সহযোগিতা দিয়ে যাবে।’