ফুটবল খেলার ইতিহাস হাল আমলের হলেও মানব সভ্যতার ইতিহাস এবং খেলাধুলার ইতিহাস প্রায় হাত ধরাধরি করে চলছে। খ্রিস্টপূর্ব ৪ হাজার বছর আগে ইরাক দেশে কুস্তি খেলার সূচনা হয়।মুষ্টি যুদ্ধ, অসিযুদ্ধ দৌড়-লাফ ইত্যাদিরও সূচনা সমকালীন সময়ে। প্রাচীণ গ্রীসে জীশুর জন্মের ৭৭৬ বছর আগে অলিম্পিক খেলার সূচনা হয়! অনেকেই মনে করেন খেলাধুলা নিছক আনন্দ-বিনোদনের ব্যাপার-স্যাপার। একথা মোটেও ঠিক নয়।
খেলাধুলা মানুষের মনের দুশ্চিন্তা লাঘব করে, সহনশীলতা বাড়ায় এবং দৈহিক পরিশ্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাঁতারের মতো খেলাধুলা মানুষের ফুসফুসের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। মেদ চর্বি ইত্যাদি দূর করে সুন্দর ও সুঠাম শরীর গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলা মানুষের চরিত্র গঠনেও সাহায্য করে। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, হাডুডু ইত্যাদি খেলায় নেতা নির্বাচন হয়,নেতৃত্বের গুনাবলি প্রকাশিত হয়। কৌশল,দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যদি বৃদ্ধি করে।
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ভক্তকূলের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “দূর্বল মস্তিষ্ক কিছু করিতে পারে না। আমাদিগোকে উহা বদলাইয়া সবল মস্তিষ্ক হইতে হইবে।তোমরা সবল হও, গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমার স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।”
- আরও পড়ুন
- চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর দোকানঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা
পৃথিবীর বহু দেশ এখন শিশুদের শিক্ষাজীবন শুরুই করে খেলাধুলার মধ্যদিয়ে। ইদানিংকালে আমাদের দেশেও খেলাধুলাকে শিক্ষার অংশ হিসাবে গণ্য করে সিলেবাসভূক্ত করেছে। যে কারণে এই লেখার সূত্রপাত-এবার আমাদের এলাকায় শ্রদ্ধেয় বড়ভাই জনাব এমামুল হক তাঁর নামে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট এর আয়োজন করেন,ফাইনাল খেলার অনুষ্ঠানে থাকবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল এবং এক ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছি! আমাদের এলাকায় এই প্রথম দেখলাম মুক্তিযোদ্ধা সমাজকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদসহ বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে প্রায় ৫০ জনের অধিক মানুষকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হলো!
একটা বিষয়ে একটু কমতি মনে হয়েছে তা হলো কৃষকের জন্য কোন সম্মাননার ব্যবস্থা ছিল না! আশা করি আগামীতে এই বিষয়ে এমামুল ভাই ভেবে দেখবেন। তিনি যে স্বপ্ন দেখছেন, যুবসমাজের মাদকাশক্ত থেকে দূরে রাখা, ইভটিজিং প্রতিরোধ করা, বাল্যবিবাহ শূণ্যের কোটায় নামিয়ে নিয়ে আসা, পাড়া মহল্লায় পাঠাগার গড়ে তোলা এবং একদল সৃজনশীল মানুষ তৈরী করা, সামাজিক সংস্কৃতি সংগঠন গড়ে তোলা, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা ইত্যাদির মাধ্যমে যুব সমাজের আগামীর ভবিষ্যৎ বিনির্মান করা। তিনি যে মহান উদ্যোগগুলো হাতে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এই উদ্যোগ তাঁর একার পক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা কখনোই সম্ভব নয়। ব্যক্তি উদ্যোগ সামাজিক উদ্যোগে পরিণত না হলে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব হয় না। কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ভাষায় আহবান জানাই-
ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,
ওরে সবুজ, ওরে অবুজ,
আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।
এই আধমরা সমাজকে বাঁচাবার জন্য কবি সাহিত্যিকরা বার বার তরুনদের প্রতি আহবান করে গেছেন।
আপনাদের জানা থাকবার কথা ইসলাম ধর্মের নবী, রাসুল (সাঃ) কাদের নিয়ে হিলফুল ফুজুল (শান্তি সংঘ) গঠন করেছিলেন। রাশিয়ান বিপ্লবের রেড আর্মি কাদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধও নেতৃত্ব দিয়েছেন এদেশের তরুন যুবকরা। এমামুল ভাইয়ের এই নির্মোহ ভালবাসার সারথি হতে পারে এলাকার তরুন যুবকরাই। এলাকার তরুন যুবকদের প্রতি আহবান জানাই তাঁর সাথে মিথোজীবীতার সম্পর্ক গড়ে তুলুন,পরস্পর পরস্পরকে সহোগিতা করুন। তবেই অতীতের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলছেন-
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে।
একদিকে সমাজ হিতৈষীদের এগিয়ে আসতে হবে অন্যদিকে তরুনদেরকে জেগে উঠতে হবে এই দুয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীর সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে।
লেখক-
মতিউর রহমান মিঠু
সমাজকর্মী