নতুন বিরোধে জড়িয়েছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। ওমান উপসাগরে তেলবাহী একটি ট্যাংকার জব্দের ঘটনায় দুদেশের মধ্যে নতুন করে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) ওমান উপসাগর থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে ইরানের নৌবাহিনীর সদস্যরা। এর পর থেকেই দুদেশের মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন করে এ বিরোধ।
গত শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, দেশটির নৌবাহিনীর কমান্ডোরা হেলিকপ্টার নিয়ে অভিযান চালাচ্ছেন। তারা ‘অ্যাডভানটেজ সুইট’ নামে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী একটি ট্যাংকার জব্দ করেন।
তুরস্ক পরিচালিত চীনা মালিকানাধীন ট্যাংকারটি হরমুজ প্রণালি হয়ে ওমান উপসাগরে প্রবেশ করেছিল। মার্কিন জ্বালানি সংস্থা শেভরন কর্পোরেশনের জন্য কুয়েতি অপরিশোধিত তেল বহন করে টেক্সাসের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল ট্যাংকারটি।
ইরানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, পারস্য উপসাগরে ইরানের একটি নৌকার সঙ্গে সংঘর্ষের পর পালানোর চেষ্টা করে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী একটি তেলের ট্যাংকার। ওই সংঘর্ষে নৌকার কয়েকজন আহত হয়। আরও দুইজন হয় নিখোঁজ। তারপর রেডিও সিগন্যাল না মেনেই ট্যাংকারটি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এর আট ঘণ্টা পর আদালতের আদেশের ভিত্তিতে তাড়া করে এটিকে আটক করা হয়।
এ অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া ইরানের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা মোস্তফা তাজোদিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্ত করার জন্য আমরা বারবার জাহাজটিকে থামানোর জন্য সতর্ক করেছি; কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।’
ট্যাংকারটি অ্যাডভানটেজ ট্যাংকার নামে তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠানের। ট্যাংকারটির ব্যবস্থাপক বলেন, জব্দ ট্যাংকারে ২৪ ক্রু রয়েছেন, যার সবই ভারতীয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মার্কিন সামরিক বাহিনীর পঞ্চম নৌবহর বলছে, ইরানের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ট্যাংকারটি অবিলম্বে ছেড়ে দিতে তেহরানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মার্কিন নৌবহরের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ইরান একের পরে এক জাহাজ জব্দ এবং আঞ্চলিক সমুদ্রসীমায় জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। তাদের এ ধরনের পদক্ষেপ সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। গত দুবছরে ইরান অন্তত পাঁচটি বাণিজ্যিক জাহাজ জব্দ করেছে বলে মার্কিন নৌবহরের পক্ষে দাবি করা হয়।
আঘাতের বদলে আঘাত
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে ইরানের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার আওতায় সম্প্রতি একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। তারই প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রগামী ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ধরনের পদক্ষেপের ঘটনা আগেও দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র গত বছর গ্রিসের কাছে ইরানি তেলের একটি কার্গো বাজেয়াপ্ত করেছিল। জবাবে তেহরান দুটি গ্রিক ট্যাংকার জব্দ করে কয়েক মাস আটকে রাখে। গ্রিসের সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে অবশেষে বিষয়টির সুরাহা হয়।