এক পর্ন তারকাকে ঘুষ দেয়ার মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একটি বিচার চলমান রয়েছে। তার মধ্যেই ধর্ষণের অভিযোগে আলাদা এক মামলায় আরও একটি বিচার শুরু হয়েছে। বুধবার (২৬ এপ্রিল) নিউইয়র্কের একটি আদালতে শুরু হওয়া ওই বিচারের শুনানিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী সাবেক সাংবাদিক ও কলামিস্ট ই জ্যা ক্যারল।
সিএনএনের প্রতিবেদন মতে, এদিন আদালতে দাঁড়িয়ে কিভাবে ট্রাম্পের ধর্ষণের শিকার হন তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন ই জ্যা ক্যারল। তিনি বলেন, ‘আজ আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। কারণ ট্রাম্প আমাকে ধর্ষণ করেছিলেন। এরপর যখন বিষয়টি আমি সবাইকে জানিয়ে দিই, তখন তিনি (ট্রাম্প) বলেন, এমনটা ঘটেইনি।’
শুধু তাই নয়, ধর্ষণের পর তাকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে উপহাসও করেছিলেন ট্রাম্প। ক্যারল আরও বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) মিথ্যা বলে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। আমার সেই জীবন ফিরে পেতে আজ আমি এখানে।’ তবে ট্রাম্পের আইনজীবী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, ক্যারল অর্থ ও খ্যাতি পাওয়ার লোভে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন।
বর্তমানে ক্যারলের বয়স ৭৯ বছর। প্রবীণ এই নারীর দাবি, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ম্যানহাটনের ফিফথ অ্যাভিনিউতে একটি বিলাসবহুল ডিপার্টমেন্ট স্টোরে তাকে যৌন নির্যাতন করেন ট্রাম্প।
তার অভিযোগ, ট্রাম্প নারীদের অন্তর্বাস উপহার দেয়ার বিষয়ে পরামর্শ চাওয়ার নাম করে একটি পোশাক পরিবর্তন করার কক্ষে (ট্রায়াল রুমে) ক্যারলকে ডেকে নিয়ে যান এবং সেখানেই তাকে ধর্ষণ করেন।
ক্যারলের আইনজীবী শন ক্রাউলি ম্যানহাটন আদালতকে বলেন, ‘ট্রায়াল রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর ক্যারলের সঙ্গে জোরজবরদস্তি শুরু করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের গায়ের জোরের কাছে পেরে ওঠেননি ক্যারল।’ ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্কের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম মুখ খোলেন ক্যারল।
বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ক্যারল ‘মিথ্যা’ কথা বলছেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান নেতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এই দাবিও করেন যে, ক্যারলের সঙ্গে তার কখনও দেখাই হয়নি।
এরপরই ক্যারল ২০১৯ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। কিন্তু বহু বছর পর অভিযোগ করার কারণে ধর্ষণের মামলা রুজু করতে পারেননি। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে নিউইয়র্কে নতুন একটি আইন কার্যকর হওয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন ক্যারল।
শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে মুখ না খুলতে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেফতার হন ট্রাম্প। যদিও সঙ্গে সঙ্গে জামিন পেয়ে যান তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আইনমতে, শেষ পর্যন্ত সবক’টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ১৩৬ বছর পর্যন্ত জেলে কাটাতে হতে পারে ট্রাম্পকে।
তবে তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ ও বিচারকে প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলছেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়া বাধাগ্রস্ত করতে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থিতার দৌড়ে সামনের সারিতে থাকা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
এই বিচার প্রক্রিয়ায় ট্রাম্প আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাকে বিচারের জন্য হাজিরা দিতে হচ্ছে না। আত্মপক্ষ সমর্থনে ট্রাম্প সম্ভবত কিছু বলবেন না বলেও আভাস দিয়েছেন আইনজীবীরা। আর ক্যারলের আইনজীবীরাও তাকে সাক্ষী হিসাবে ডাকার কোনো পরিকল্পনা করেননি।