পাকিস্তানে সম্পদ বণ্টনে অসমতা এক স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যার ছোট একটি অংশ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক। দেশটির অর্থ বিষয়ক গণমাধ্যম ডেইলি বিজনেস রেকর্ডার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে।
ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ডেটাবেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের ১০ ভাগ ধনী পরিবার দেশের আয়ের ৪২ শতাংশ উপার্জন করে, যেখানে ৫০ ভাগ গরিব পরিবারের আয় মাত্র ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ পাকিস্তানের ধনী পরিবারগুলো সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের আয়ের তিনগুণ বেশি আয় করে।
বিজনেস রেকর্ডারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্পদ বণ্টনের এই বৈষম্য দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির ভয়াবহতা এবং নিম্ন প্রবৃদ্ধির কারণে এই পরিসংখ্যান আরও বাড়তে বাধ্য।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিষয়টিতে নজরে রাখলে দেখা যায় সবচেয়ে ধনীরা দরিদ্রতমদের গড় আয়ের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি উপার্জন করে। গিনি সহগ অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক যা কোনো দেশের আয় বা সম্পদের বণ্টনের অসমতা বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। গিনি সহগে শূন্য নিখুঁত সমতার প্রতিনিধিত্ব করে। আর এক নিখুঁত বৈষম্য নির্দেশ করে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০১৮ সালে পাকিস্তানের সূচক ছিল শূন্য দশমিক ৩১৪। এটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের গড় শূন্য দশমিক ৩১৩ এর চেয়ে বেশি।
এর একটি প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক অগ্রগতি থেকে লাভবান ছোট একটি অভিজাতদের হাতে সম্পদ বৃদ্ধি। ফলে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে আয় এবং সম্পদে বড় বৈষম্য দেখা দেয়। দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারীরা প্রায়শই স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক পরিষেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হয়, যা দরিদ্র চক্রের দিকে নিয়ে যায় এবং এই চক্র ভাঙা কঠিন।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সীমিত সুযোগে বৈষম্য আরও বাড়ায়। এর প্রভাব বিভিন্ন স্থান এবং সমাজে বিভিন্নভাবে পড়ে। যেমন পাকিস্তানে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ প্রায়ই বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হয়।
এ ছাড়াও পাকিস্তানে বড় ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য রয়েছে। নারীরা প্রায়শই বৈষম্যের সম্মুখীন হয় এবং সীমিত শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। ফলে লিঙ্গ ভেদে বেতনে তারতম্য হয়। এতে একই কাজ করে নারীর তুলনায় পুরুষ উপার্জন বেশি করে।
সব মিলিয়ে আয় বণ্টনে তলানিতে থাকা ব্যক্তিরা সুযোগ এবং প্রভাবের কারণে ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ে। আর এই বৈষম্য সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে নিয়ে যায়। নিয়ে যেতে পারে অপরাধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধির দিকেও— যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য নেতিবাচক পরিণতি ঘটায়।