ভারত এবং বাংলাদেশে মোটরবাইকে জ্বালানি তেল ভরা নিয়ে একটি উপদেশমূলক সতর্কবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। বার্তাটির মূল কথা হলো, কোনো অবস্থাতেই এই তীব্র গরমে মোটরবাইকের ট্যাংক পরিপূর্ণ করে তেল নেয়া যাবে না। নিলে প্রচণ্ড গরমে তেল আয়তনে বেড়ে গিয়ে যেকোনো সময় ট্যাংক বিস্ফোরিত হতে পারে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টাইমসের খবর, এ ধরনের সতর্কবার্তা ভুয়া। কারণ ভারত বা বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কোনো সতর্কবার্তা জারি করেনি।
ভারতে এ ধরনের গুজব এই প্রথম নয়। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালেও এ ধরনের গুজব ছড়িয়েছিল দেশটিতে। সে সময় ভারতের জ্বালানি তেল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্ডিয়ান ওয়েলের নামে একটি গুজব ছড়ানো হয়েছিল। সে সময় এক টুইটে ইন্ডিয়ান ওয়েল বিষয়টি খোলাসা করেছিল।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোটরবাইকে ব্যবহৃত জ্বালানির সেলফ ইগনিশন বা অটো ইগনিশন তাপমাত্রা। সেলফ ইগনিশন বা অটো ইগনিশন তাপমাত্রা হলো এমন পর্যায়ের তাপমাত্রা যেখানে কোনো জ্বালানি তরল থেকে বাষ্পে পরিণত হয় এবং বাইরের কোনো শক্তির সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে জ্বলে উঠতে পারে।
সাধারণত মোটরবাইকে পেট্রোল বা অকটেন এবং অন্যান্য যন্ত্রে ডিজেল ব্যবহার করা হয় জ্বালানি হিসেবে। পেট্রোল এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে অটো ইগনিশন তাপমাত্রা হলো যথাক্রমে ২৪৬ ডিগ্রি এবং ২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু আমাদের পরিবেশের তাপমাত্রা এতটা চরম পর্যায়ে এখনো যায়নি।
এ ছাড়া মোটরবাইক কিংবা অন্যান্য গাড়ির ফুয়েল ট্যাংকে ইভ্যাপোরেটিভ এমিশন সিস্টেম (ইইএস) ব্যবহার করা হয়। এই সিস্টেমের একটি অংশ হলো ফুয়েল ট্যাংক প্রেশার সেন্সর। যার কাজ হলো ট্যাংকের ভেতরে থাকা জ্বালানি ট্যাংকের গায়ে কী পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করছে তা পরিমাপ করা। এ ছাড়া ইইএস ট্যাংক থেকে কোনো চোরাপথে জ্বালানি লিক হচ্ছে কিনা তাও জানতে পারে।
সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশের বর্তমান তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হলে তা জ্বালানিকে অটো ইগনিশন পয়েন্টে নিয়ে যেতে যথেষ্ট নয় এবং ট্যাংকে থাকা সিস্টেম জ্বালানির চাপও পরিমাপ করতে সক্ষম। তাই ৪০/৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ট্যাংক পূর্ণ করে জ্বালানি ভরলে তা বিস্ফোরিত হবে এমনটা সম্ভব নয়।