আফ্রিকার দেশ সুদানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যকার সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতরা সবাই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬০০ জন। রোববার (১৬ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষর্দশীরা জানিয়েছেন, রাজধানী খার্তুমের নিকটবর্তী শহর অমদুরমানে সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষের ফলেই ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
সুদানে ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশটির সেনাবাহিনী। পরে প্রায় ১ লাখ সদস্য বিশিষ্ট দেশটির আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফও অন্তবর্তী সরকার গঠনের বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতায় ভাগ বসাতে চাইলে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বই বর্তমানে সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা রোববার সকালের দিকে খার্তুম, অমদুরমান এবং বাহরি শহরে ব্যাপক গোলাগুলি এবং ভারি শেল নিক্ষেপের আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন। এ ছাড়া লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর পোর্ট সুদানেও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
সুদানি বেসরকারি সংস্থা দ্য সুদানিজ ডক্টরস ইউনিয়ন হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। একই সময়ে আহত হয়েছে আরও অন্তত ৫৯৫ জন। আহতদের মধ্যে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এ সংঘাত কেবল সুদান নয়, আশপাশের অঞ্চলকেও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। পাশাপাশি এটি এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে উপসাগরীয় দেশগুলোকেও জড়িয়ে ফেলতে পারে। আর সেই সূত্র ধরে হাজির হয়ে যেতে পারে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো।
সুদানের সশস্ত্রবাহিনী ব্যাপকভাবে সুদানের বর্তমান ডি ফ্যাক্টো শাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের প্রতি অনুগত। তবে অন্যদিকে আরএসএফ মোহাম্মদ হামদান দাগালোর অনুগত, যিনি হেমেদতি নামেই বেশি পরিচিত।
তবে ফোনে আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আরএসএফ কমান্ডার জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানকে ‘ক্রিমিনাল’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, সেনাবাহিনীই অভ্যুত্থান চেষ্টা করছে। আরএসএফ সেনাদের সংঘর্ষে বাধ্য করা হয়েছে।
আরএসএফ প্রধান আরও বলেন, বর্তমান লড়াই একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে এবং সব অপরাধীর বিচার হবে। তার কথায়, ‘এই লড়াই কখন শেষ হবে তার কোনো সময়সীমা আমি দিতে পারছি না। তবে আমরা যতটা সম্ভব কম ক্ষয়ক্ষতির মধ্যদিয়ে এই লড়াই শেষ করতে চাই।’
কমান্ডার হামদান আরও বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করছি, সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটগুলো মেরোওয়েতে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। অন্যান্য অনেক ইউনিট আত্মসমর্পণ করেছে। আল-বুরহান একজন ক্রিমিনাল। তিনি একজন মিথ্যাবাদী, মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছেন। তার কথা কারও শোনা উচিত নয়।’
কমান্ডার হামদানের ওই বক্তব্যের পরই টেলিফোনে আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে আরএসএফ কমান্ডারের দাবি নাকচ করে দেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, সেনা সদর দফতর ও খার্তুম বিমানবন্দর সেনাবাহিনীর দখলেই রয়েছে।
এদিকে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান ও আরএসএফ নেতা জেনারেল হামদানকে অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সুদানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের লাশের ওপর দিয়ে কেউ বিজয়ী হতে পারবে না।’