এতোদিন মানুষের জন্য হলেও এবার কক্সবাজারে গরুর জন্য দেয়া হচ্ছে প্রত্যয়নপত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের একটি প্রত্যয়নপত্র ছড়িয়ে পড়ায় আলোচনা-সমালোচনা ঝড় ওঠেছে সর্বত্র।
গত ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দোছড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. মুছাদেকের ছেলে নেছার উদ্দিনকে স্থানীয় ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান ছালেহ আহমদ ও ইউপি সদস্য মো. আবু আইয়ুব আনছারী স্বাক্ষর করে তার ‘গরুর’ জন্য একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। এতে গরুটির গায়ের রঙ লাল এবং শিং-এর দৈর্ঘ্য ৪ ইঞ্চি উল্লেখ করা হয়। আর তার টাকার বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায় নিজ বাড়িতে দীর্ঘদিনের পালিত এ গরুটি স্থানীয় গর্জনিয়া বাজারে বিক্রি করবে বলে তথ্য উল্লেখ করা হয়। গরুর জন্য প্রত্যয়নপত্র দেয়ার এ নিয়ম কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চালু থাকলেও জেলার অন্য কোনো ইউপিতে নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গেলো কয়েক মাস ধরে সীমান্ত জেলা কক্সবাজার ও বান্দরবানের নানা পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে আসছে গরুর চালান। এজন্য সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি গরু পাচারকারী সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিনই আসছে গরুর অবৈধ চালান। এরই মধ্যে সীমান্তে বিভিন্ন সময়ে বিজিবির অভিযানে জব্দ হয়েছে অন্তত দুহাজার গরু।
রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গরুর মালিক ও খামারিরা বলেন, মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গরুর চালান আসছে। এসব কারণে স্থানীয়দের বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে পালিত গরু নিয়ে। হাটেও বেচা-কেনা করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থায় গরুর প্রত্যয়নপত্রের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছি।
তারা আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে চোরাই গরুর চালান আসছে, এটা সত্য। কিন্তু প্রশাসন তো জানে না কোনটা খামারের বা কোনটা মিয়ানমারের গরু। অনেক সময় স্থানীয়দের পালিত গরুগুলো মিয়ানমারের বলে মনে করা হয়। তাইতো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে হাটে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজকর্মী হাফিজুর ইসলাম চৌধুরী বলেন, কচ্ছপিয়া দিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত খুবই কাছে। তাই এ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে অবাধে গরু আসছে। ফলে স্থানীয়রা খুবই হুমকির মুখে পড়েছেন। স্থানীয় যারা গরু লালনপালন কিংবা খামার গড়ে তুলেছেন, তারা এখন উদ্বিগ্ন।
এ ব্যাপারে রামুর ০৩ নং কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ছালেহ আহমদ বলেন, খামারি যারা ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন তাদের খামারে চৌকিদার পাঠানো হয়। চৌকিদার সঠিক তথ্য দেয়ার পর সেসব গরুর প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়। স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে এ প্রত্যয়নপত্রের জন্য কোনো প্রকার টাকা নেয়া হয় না।
ছালেহ আহমদ বলেন, মূলত মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে আসা গরু বিক্রি বন্ধ ও স্থানীয় গরু বিক্রেতাদের দুর্ভোগ লাঘবে দেয়া হচ্ছে গরুর প্রত্যয়নপত্র।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে মিয়ানমার থেকে কোনোভাবেই গরু আনা যাবে না। বিশেষ করে, দেশীয় খামারিদের এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত। সুতরাং, কেউ যদি কোনোভাবে মিয়ানমার থেকে অবৈধপথে গরু আনাটাকে বৈধ করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে, আর এটা যদি প্রমাণ হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কোনোভাবেই ছাড় দেবে না।
মো. আবু সুফিয়ান বলেন, দেশি গরু বলে যে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হচ্ছে, সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরেছি। জানার পরপরই তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে দেশীয় গরু বলে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হচ্ছে সেটি একজন চেয়ারম্যানের কথায় উঠে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে বলতে পারি, শুধু জনপ্রতিনিধি নয়; কেউই এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। যদি যুক্ত হয় এবং এটি যদি প্রমাণ হয়, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
বিজিবি ও সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে আসা গরুর কারণে স্থানীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দেশের শত কোটি টাকা প্রতিমাসে পাচার হয়ে যাচ্ছে।