টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ২০০ এর অধিক রান করার পর কোনো দলই হয়ত ভাববে না তাদের খেলায় কোনো ভুল হয়েছে। সোমবার (১০ এপ্রিল) লখনৌয়ের বিপক্ষে ২১২ রান সংগ্রহ করার পর হয়ত ব্যাঙ্গালুরুও তেমনটিই ভেবেছিল। কিন্তু নিকলাস পুরান ও মার্কাস স্টয়নিস ব্যাট হাতে মহাপ্রলয় ঘটিয়ে জয় এনে দিয়েছেন লখনৌকে। আর এই জয়ে পুরানরা যেমন ভাসছেন প্রশংসার জোয়ারে, তেমনি ব্যাঙ্গালুরুর হারের জন্য সমর্থকদের কাঠগড়ায় বিরাট কোহলি ও ফাফ ডু প্লেসিরা।
৪৪ বলে ৬১; ৪৬ বলে ৭৯! গতকালের ম্যাচে ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে এই ইনিংস দুটি খেলেন বিরাট কোহলি ও ফাফ ডু প্লেসি। বড় স্কোর করেও ব্যাঙ্গালুরুর হেরে যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে এই ইনিংস দুটিকেও দায়ী করা হচ্ছে।
ওপেনিংয়ে নেমে এদিন পাওয়ারপ্লের মধ্যেই ৪২ রান করেন কোহলি। পাওয়ারপ্লেতে এর চেয়ে বেশি রান আর কখনো করেননি তিনি। ২৫ বলে ৪২ রান করার পর অর্ধশতক করতে লাগান ৩৫ বল। শেষ ১০ বলে ৮ রান করেন কোহলি। আর নিজের খেলা শেষ ১৫ বলে মোটে ১৬ রান করেছেন তিনি। অন্যদিকে ডু প্লেসি ৪৬ বলে ৭৯ রান করলেও প্রথম ৩০ বলে তিনি করেন মাত্র ৩৩ রান। এই বলগুলো নষ্ট না করলে ব্যাঙ্গালুরুর স্কোরটা যে আরও বড় হতো তাতে কোনো সন্দেহই নেই। স্কোরটা বড় হলে জয়ের সম্ভাবনা বাড়ত আরও। টি-টোয়েন্টিতে প্রতিটি বলই গুরুত্বপূর্ণ হলেও চাহিদা মিটিয়ে খেলতে ব্যর্থ হয়েছেন কোহলি-দু প্লেসিরা।
পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৫৬ রান তোলা ব্যাঙ্গালুরু পরের আট ওভারে তোলে মাত্র ৬১ রান। লখনৌয়ের স্পিনার -ক্রুনাল পান্ডিয়া, রবি বিষ্ণয়ি ও অমিত মিশ্রদের খেলতে বেশ বেগ পেতে হয় কোহলি-দু প্লেসিকে। যে কারণে রানের গতি কমে আসে ব্যাঙ্গালুরুর। যার কারণে দলের সংগ্রহে কম পড়ে কিছু রান।
বিপরীতে সুপার জায়ান্টের শুরুটা ভালো না হলেও মার্কাস স্টয়নিস এসে দলের রানের চাকা এক্সিলারেট করে দিয়ে যান। শুরুতে ৪ ওভারে ২৩ রান তুলতেই তিন উইকেট হারায় লখনৌ। এরপরও ১১ ওভারের আগেই শতরানের গণ্ডি পার হয় তারা। ৩০ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন স্টয়নিস। আর স্টয়নিসের পর ম্যাচটা লখনৌয়ের হাতে এনে দেন নিকলাস পুরাণ। ১৯ বলে ৪ চার ও ৭ ছয়ে ৬২ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর আয়ুস বাদনি ম্যাচের লাগাম ধরেন। শেষ দিকে কিছুটা নাটকের পর শেষ বলে ম্যাচ জিতে নেয় লখনৌ।
এখানে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ম্যাচের মাঝের ওভারে বল করতে আসা স্পিনারদের পারফরম্যান্সকে ধরা যায়। পাওয়ার প্লের পরের আট ওভার এ যেখানে ব্যাঙ্গালুরু তুলেছিল ৬১ রান, সেখানে লখনৌ এ সময় তুলেছে ১১৭ রান, যা টুর্নামেন্টটির ইতিহাসেরই দ্বিতীয় সেরা সংগ্রহ। এর মধ্যে দুই স্পিনার কর্ণ শর্মা ও শাহবাজ আহমেদ মিলিয়ে করা চার ওভারেই ৬৩ রান তোলে লখনৌ। অন্যদিকে ব্যাঙ্গালুরু স্পিনের বিপক্ষে দশ ওভারে তোলে ৯২ রান। এই পার্থক্যই মূলত গড়ে দিয়েছে ব্যবধান।
অর্ধশতকের কাছাকাছি পৌঁছে কোহলির ‘ধীরে খেলো নীতি’র কড়া সমালোচনা করেছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক খেলোয়াড় ও ধারাভাষ্যকার সায়মন ডুল। তিনি কাঠগড়ায় কোহলিকে তুলে বলছেন, ‘শুরুতে কোহলির ইনিংসের গতি ছিল ট্রেনের মতো। অনেক শট খেলছিল। তবে ৪২ থেকে ৫০ রানে যেতে কোহলি ১০ বল খেলেছে। মাইলফলকের কথা ভেবেছে। আমার মনে হয় না এখন আর খেলায় এসবের কোনো জায়গা আছে।’
কোহলির ইনিংসের মতো ডু প্লেসির ইনিংসের শুরুতে বল নষ্ট করার প্রবণতার সমালোচনা করেছেন ভারতীয় বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে। তিনি মনে করেন, শুরুতে যে বলগুলো নষ্ট হয় সেগুলো আর পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ‘এই খেলাটাই বলে দেয় স্ট্রাইক রেট নিয়ে এত দিন আমরা কী আলোচনা করছি। কোহলি ৪৪ বলে ৬১ রান, তার স্ট্রাইক রেট ১৩৯, শেষ ১৫ বলে করেছিল ১৬ রান। ডু প্লেসি ৪৬ বলে ৭৯, স্ট্রাইক রেট ১৭২, তবে প্রথম ৩০ বলে করেছিল ৩৩ রান। এই বলগুলো আর ফিরে পাওয়া যায় না। আরসিবি জয়ের জন্য যথেষ্ট সংগ্রহ পায়নি। আর আলোচনাটা ইনিংস শেষ ব্যাটসম্যানের কত স্ট্রাইক রেট থাকল, তা নিয়ে নয়।’