মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগন থেকে বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এ নিয়ে বেশ নাকানি-চুবানি খাচ্ছেন দেশটির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। পাশাপাশি দেশটির রাজনীতিবিদরা কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছেন বাইডেন প্রশাসনকেও। তাদের প্রশ্ন হলো, কীভাবে এত সুরক্ষিত গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে!
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন নিউজের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেন্টাগন থেকে ফাঁস হওয়া নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং শত্রু দেশগুলোর ওপর গোয়েন্দা মূল্যায়নের মূল্যবান তথ্য রয়েছে। যদিও প্রায় সব সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ নথি ফাঁস ঠেকাতে এবং ফাঁস হওয়া নথি উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও মিত্র দেশগুলোর আশঙ্কা, এ নথি ফাঁস হওয়ার ফলে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে।
কী ঘটেছে
নথিগুলোর বিষয়ে প্রথম জানা যায় গেলো মার্চের শেষ দিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ডিসকর্ডে নথিগুলোর ব্যাপারে পোস্ট করা হয় বেশ কিছু ছবি। পরে গত শুক্রবার (৭ এপ্রিল) নথিগুলোতে থাকা তথ্যও ফাঁস হতে থাকে, যার অধিকাংশই অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি বলে লিপিবদ্ধ ছিল।
তবে এখনো জানা যায়নি এ নথি ফাঁসের পেছনে কে বা কারা জড়িত। ডিসকর্ডের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বিষয়টির রহস্য উদ্ধারে।
নথিতে কী রয়েছে
সিএনএন জানায়, তারা মোট ৫৩টি ফাঁস হওয়া নথি পর্যালোচনা করেছে। এসব নথির সবই তৈরি করা হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে। নথিগুলোতে অতি স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কীভাবে মার্কিন মিত্র এবং শত্রু দেশগুলোর ওপর নজরদারি চালায়, সে বিষয়ে তথ্য রয়েছে এতে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ফাঁস হয়ে যাওয়া এসব নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশে মার্কিন গোয়েন্দাগিরির তথ্য উন্মোচন করে দেয়া হয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দারা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দেশটির ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী সংস্থা ওয়াগনারের কতটা গভীরে প্রবেশ করে গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছে, সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। বিশেষ করে কীভাবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং ওয়াগনারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঢুকে পড়েছিল মার্কিন গোয়েন্দারা, সে বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে নথিগুলোতে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বিভাগ সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে ফাঁস হওয়া মার্কিন নথিতে। বিশেষ করে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনীরে ব্যাটালিয়নের আকার, যুদ্ধের অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে তারা কীভাবে সাড়া দেবে সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।
কেবল তাই নয়, মার্কিন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপরও নজরদারি চালিয়েছে, সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে। এ বিষয়ে জেলেনস্কির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তারা এতে অবাক হননি। তবে নথি ফাঁস হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তারা বেশ উদ্বিগ্ন।
ফাঁস হওয়া নথিগুলো থেকে আরও জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ইউক্রেন এবং রাশিয়ার ‘সিগনাল ইন্টেলিজেন্স’ ইন্টারসেপ্ট বা গোপনে জেনে ফেলেছে। বিশেষ করে রাশিয়ার সামরিক যোগাযোগে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে যাওয়া বার্তা, রাডার সিগনালসহ বিভিন্ন ধরনে অস্ত্র পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত সিস্টেম থেকে বের হওয়া সিগনাল তথা তথ্য কীভাবে জেনেছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
আরেকটি নথিতে দুই দক্ষিণ কোরীয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার উদ্বেগের বিষয়ে মূল্যায়ন লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গোলাবারুদ চেয়েছিল। ওই দুই কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
আরেকটি নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইলের ব্যাপারে মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন, ইসরাইলজুড়ে ছড়িয়েপড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভে দেশটির সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ মদত দিচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে নথিতে।
এর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের আরও কিছু মিত্র দেশ সম্পর্কে গোয়েন্দা মূল্যায়ন উল্লেখ করা হয়েছে নথিগুলোতে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সেই নথিগুলোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সিএনএন।