রাঙ্গামাটি শহরের চারপাশে কাপ্তাই হ্রদ দখলের মহোৎসব চলছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিলেও দুই মাস পরই সেখানে পুনরায় স্থাপনা নির্মাণ করছেন দখলদাররা। আবার কোথাও কোথাও নতুন করে হ্রদের ভেতর নির্মাণ করা হচ্ছে সীমানাপ্রাচীর। এভাবে কাপ্তাই হ্রদে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পরও চলে ভাঙা-গড়ার ভয়ংকর খেলা।
সরেজমিনে রাঙ্গামাটি বাস টার্মিনালের পাশে গিয়ে দেখা যায়, হ্রদের বুকজুড়ে কাঁচাপাকা স্থাপনাই বলে দিচ্ছে, কী ভয়ংকরভাবে দখল করা হয়েছে এই হ্রদটি। শুধু বাস টার্মিনালই নয় শহরের রিজার্ভ বাজার, বনরুপা, তবলছড়ির চিত্রও একই রকম। যেভাবে হ্রদে দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা।
এদিকে এমন বাস্তবতায় দখলদারদের চাপে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সুশীল সমাজ। তাদের দাবি এতে দখলে প্রবণতা বাড়বে বহুগুণ।
রাঙ্গামাটি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, প্রতিটি ক্রিয়ার সমান বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। উচ্ছেদ করতে গিয়ে দখলবাজদের তোপের মুখে অভিযান বন্ধ হয়ে গেল। তাহলে দখলদারদের কাছে কী বার্তা গেল। এখন দখলদারদের ধারণা জন্মেছে, তারা এক হলে তাদের কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না। ফলে এদের দখল প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে।
দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পাদক ফজলে এলাহী বলেন, সামান্য কয়েটি দোকান উচ্ছেদ করা হলো। কিন্তু দুই মাস না যেতেই সেগুলো আবার পুনস্থাপন করা হলো, এটি দুঃখজনক। প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। অন্যথায় এদের হাত থেকে এই হ্রদকে রক্ষা করা যাবে না। আমাদের সবাইকে রাঙ্গামাটির পরিবেশ রক্ষায় একাট্টা হতে হবে। যেটা করা না গেলে ভায়াবহ বিপর্যয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
জেলা স্কাউটস সাধারণ সম্পাদক আবছার আলী বলেন, আমরা চাই যে কোনো মূল্যে কাপ্তাই হ্রদ দখলমুক্ত করা হোক। আমি আশা করব, প্রশাসন আবার অভিযান শুরু করবে।
তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন বলেন, উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ নয়, তালিকা প্রণয়ন কাজ চলছে। এটি একটি চলমান কাজ। কিন্তু আর যাতে নতুন করে কেউ হ্রদ দখল করতে না পারে সেটার দিকে নজর দিচ্ছি। কারণ কাপ্তাই হ্রদ মূলত শুষ্ক মৌসুমে দখল হয়।
কাপ্তাই হ্রদ দখল করে কী পরিমাণ অবৈধ স্থাপনা তৈরি হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যানে নেই কোথাও। তবে সুশীল সমাজের মতে শুধু রাঙ্গামাটি শহরেই এই সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।