মাদক বিক্রির টাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র সংগ্রহ করছে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা। একইসঙ্গে এসব অস্ত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে অপহরণ, হত্যাসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছে তারা। এ সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি অস্ত্রের উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে র্যাব।
শনিবার (০৮ এপ্রিল) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিং-এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
র্যাব জানায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে গোপনে অস্ত্র সংগ্রহ করছে আরসা সন্ত্রাসীরা। এসব অস্ত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে অপহরণ, হত্যাসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছে তারা। তাই আরসার সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে অস্ত্র বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন পার না হতে আবারও সরবরাহকারী এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র্যাব।
শুক্রবার (০৭ এপ্রিল) বিকেলে শহরের বাহারছড়ায় অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি শুরু করে র্যাব। একপর্যায়ে র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগসহ এক ব্যক্তি দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তি হাতে থাকা ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে জব্দ করা হয় দেশীয় তৈরি ৪টি শুটারগান, ৩ রাউন্ড কার্তুজ ও দুটি অটোস্নাইপার রাইফেলের গুলি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটক ব্যক্তি আরিফ হোসেন টেকনাফের নয়াপাড়া মোছনি ১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-ব্লকের বাসিন্দা। সে দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকা হতে অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করে গোপনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সন্ত্রাসীদের কাছে সরবরাহের কথা স্বীকার করে। আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে শনিবার (০৮ এপ্রিল) দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি অস্ত্রের উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে র্যাব। এরইমধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের তালিকা করা হয়েছে। আরও চিহ্নিত করার পাশাপাশি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
অস্ত্রের উৎসের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘এ ব্যাপারে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত বড় কোনো অস্ত্রের চালানের সন্ধান পায়নি, আপাতত দৃষ্টিতে এটাও আড়াল করছি না। কারণ এখন বড়সড় অস্ত্রের চালান আসছে না, ভবিষ্যতে আসবে না এ আশঙ্কা আমরা ফেলে দিতে পারছি না।’
‘প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থান থেকে ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত বিভিন্ন পরিমাণ ইয়াবা জব্দ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এখন এক অপরাধের টাকা আরেকটা অপরাধে খরচ করছে। কারণ তাদের চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা ও ডাকাতিসহ নানা অপরাধে নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে অনেকাংশে মাদক বিক্রির টাকা অবৈধ অস্ত্র কেনার কাজে ব্যবহার করছে তারা।’
এরআগে বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহকারী মূলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ৪টি অস্ত্র ও অস্ত্র বিক্রির নগদ টাকা।