রাশিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রায় একই সময়ে তেলের উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। এ সিদ্ধান্ত ফাটল ধরাতে পারে রিয়াদ ওয়াশিংটন সম্পর্কে। যুক্তরাষ্ট্রের বদলে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে সৌদি আরব। তেলের উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত তারই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আরব মিত্র সৌদি আরব। সর্বশেষ মস্কোর সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রায় একই সময়ে তেলের উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে রিয়াদ। রোববার সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ওপেক এবং রাশিয়ার হঠাৎ করে তেলের উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণার পরপরই বিশ্ববাজারে বেড়ে যায় অপরিশোধিত তেলের দাম।
এদিকে ওয়াশিংটনের আহ্বান উপেক্ষা করে তেলের উৎপাদন হ্রাসের রিয়াদের এই সিদ্ধান্ত অবাক করেছে অনেককেই। প্রশ্ন উঠছে পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে। পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে সৌদি আরবের। ওপেকের উৎপাদন হ্রাসের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে মস্কো ও রিয়াদের সম্পর্কের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি উদ্ধারে তেলের দাম বাড়াতে অনেক দিন ধরেই ওপেকের নিয়ন্ত্রক সৌদি আরবের সঙ্গে দেন দরবার করছিলো মস্কো। এর অংশ হিসেবে গত মাসে মস্কোয় সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় পুতিন প্রশাসন। মূলত এই সফরেই তেলের উৎপাদন হ্রাসের পরিকল্পনা হয় বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে ওপেকের এই সিদ্ধান্ত ফাটল ধরতে পারে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কে। বিশ্লেষকদের মতে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন সৌদি যুবরাজ। বিশেষ করে তুরস্কে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয় সৌদি যুবরাজের। বিকল্প হিসেবে রাশিয়া চীনসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নেন সৌদি যুবরাজ। এমনকি গত মাসে চীনের মধ্যস্থতায় চিরশত্রু ইরানের সঙ্গেও বৈঠক করে সৌদি আরব।
পররাষ্ট্র নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পশ্চিমাদের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে ভিশন ২০৩০ নামের এক মেগা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। এ জন্য খরচ হচ্ছে বহু বিলিয়ন ডলার। এই মেগা-প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও তেলের দাম উঁচু রাখতে বদ্ধপরিকর সৌদি আরব।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটে আক্রান্ত ইউরোপকে সুবিধা দিতে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে রিয়াদের ওপর চাপ দিচ্ছিলো ওয়াশিংটন। এমনকি গত বছর সৌদি আরব সফরে গিয়ে এ ব্যাপারে রীতিমতো হুমকিও দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু বাইডেনের এসব হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো তেলের উৎপাদন কমায় সৌদি আরব।
সব মিলিয়ে বর্তমানে ওয়াশিংটনের স্বার্থের চেয়ে নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থকেই গুরুত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। আর এক্ষেত্রে রিয়াদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া ও চীন।