মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিসহ (এনএলডি) ৪০টি রাজনৈতিক দল বিলুপ্তির ঘোষণায় উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্বের চার প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। রাজনৈতিক দল বিলুপ্তি দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশ আরও বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে সতর্ক করেছে দেশগুলো। খবর রয়টার্স।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দেশটির সামরিক সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন এক ঘোষণায় জানায়, নতুন নির্বাচনী আইন অনুযায়ী নতুন করে দলের নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এনএলডিসহ ৪০টি রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করা হবে।
বুধবার (২৯ মার্চ) এক বিবৃতিতে মিয়ানমার জান্তা সরকারের এই পদক্ষেপে উদ্বেগ জানায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নির্বাচন থেকে এনএলডিকে বিলুপ্তির ঘোষণা নিয়ে আমরা বেশ উদ্বিগ্ন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর ফলে চলমান পরিস্থিতির উন্নতি আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়বে। সু চি ও তার দল এনএলডির মুক্তির জন্য এবং এই সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য জাপান মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হওয়ায় মোট ৪০টি রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। দলগুলোর মধ্যে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডিও রয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন করে নিবন্ধন করার নির্দেশ দেয় সরকার। জানানো হয়, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য দলগুলোকে দুই মাস সময় বেধে দেয়া হয়। যদিও বিরোধীরা বলছে, এভাবে জান্তা সরকার অবাধ বা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না।
স্থানীয় মায়াবতী টিভি জানায়, এনএলডিসহ যেসব দল নির্বাচনের জন্য নিবন্ধন করেনি, সেই দলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অবশ্য এনএলডি ইতোমধ্যে বলেছে, জান্তা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না।
মিয়ানমারে ২০২০ সালের নভেম্বরের সংসদীয় নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করে সু চির দল এনএলডি। তবে সেনাবাহিনীর দাবি, নির্বাচনে জালিয়াতি করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথগ্রহণের দিন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির কুখ্যাত সেনাবাহিনী।
শুধু তাই নয়, এনএলডির নেত্রী সু চিকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েক মামলা দায়ের করা হয়। গত দুই বছরে সেসব মামলায় এখন পর্যন্ত তাকে মোট ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ক্ষমতাগ্রহণের পরই এক বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং নেতৃত্বাধীন জান্তা সরকার। তবে সেই প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি। সম্প্রতি আবারও নির্বাচন পেছানোর ইঙ্গিত দিয়েছে জান্তা সরকার।