বন্দুক হামলায় বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ বন্দুক সহিংসতায় প্রাণ হারায়। চলতি বছরেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালের তিন মাসেই দেশটিতে ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। নতুন এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সবশেষ সোমবার (২৭ মার্চ) টেনেসি রাজ্যের ন্যাশভিলের একটি স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে তিন শিশুসহ ছয় জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় পুলিশের গুলিতে বন্দুকধারী এক তরুণীও মারা গেছে বলে জানা গেছে।
বন্দুক সহিংসতার তথ্য-উপাত্ত রাখে এমন একটি সংস্থা গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বন্দুক সহিংসতায় চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার মার্কিনি প্রাণ হারিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, এ পরিসংখ্যান থেকেই তা স্পষ্ট।
তবে মৃত্যুর এ বিশাল সংখ্যা শুধুমাত্র বন্দুক হামলার নয়, বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যারও। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্য মতে, এ সময়ে যে ১০ হাজার প্রাণহানি ঘটেছে, তার বেশিরভাগই আত্মহত্যা। শতকরা হিসেবে যা ৫৭.৯ শতাংশ। সেই হিসেবে প্রতিদিন ৬৩ জন মার্কিনি বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
মৃতদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুও আছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, ১০ হাজারের মধ্যে ৩৩৮ জন কিশোর, আর শিশুর সংখ্যা ৬০।
সংস্থাটির সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি ঘটনায় বন্দুকধারী ছাড়া কমপক্ষে চারজন মানুষ প্রাণ হারালে সেটি ‘ম্যাস শুটিং বা নির্বিচার গুলি’র ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। অবশ্য ২০১২ সালের আইনে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এফবিআই) সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি ঘটনায় তিন বা ততোধিক ব্যক্তি নিহত হলে, সেটি ‘নির্বিচার গুলি’র পর্যায়ে পড়ে।
গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১৩০টি নির্বিচার বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্বিচার গুলির ঘটনা ঘটেছে ২০২১ সালে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯০টি নির্বিচার গুলির ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৪৭টি ঘটনা ঘটে গত বছর (২০২২)। আর ৬১০টি নির্বিচার গুলির ঘটনা ঘটেছে ২০২০ সালে।
গত বছর জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেনে প্রকাশিত এক গবেষণায় গত তিন দশকে আগ্নেয়াস্ত্রে মৃত্যুর ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৯০ সাল থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ আগ্নেয়াস্ত্রে প্রাণ হারিয়েছেন।
মার্কিনিদের চেয়ে অন্যান্য দেশের খুব কম মানুষই এত বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রাখেন। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক স্মল আর্মস সার্ভের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৯ কোটি ৩০ লাখ ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র আছে। সে হিসেবে প্রতি ১০০ জনের বিপরীতে ১২০টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।
অবশ্য অনিবন্ধিত ও অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার কারণে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের প্রকৃত হিসাব পাওয়া কঠিন। ২০২২ সালের অক্টোবরে গ্যালাপের এক জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৪৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনি নিজ বাসায় আগ্নেয়াস্ত্র রাখেন।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মেরিল্যান্ড পর্যন্ত বাসিন্দারা যখন নির্বিচার বন্দুক হামলার দুঃসহ স্মৃতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করছেন, তখন অন্যরা নিজেদের আঙিনায় একই ধরনের সহিংসতার শঙ্কা নিয়েই দিন যাপন করছেন।
কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির কংগ্রেস বিভক্ত; দুপক্ষের মধ্যে নীতিগত মতভিন্নতা ব্যাপক। আর এ বন্দুক–সংস্কৃতির শিকড়ও অনেক গভীরে। ফলে নির্বিচার গুলির ঘটনা কীভাবে বন্ধ হবে, তাই এখন দেখার বিষয়।
অবশ্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বন্দুক হামলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারে মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে দ্রুত দুটি বিল পাস করতে কংগ্রেসের আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিল দুটিতে অ্যাসাল্ট ওয়েপনস ও বেশি বুলেট ধারণক্ষমতার ম্যাগাজিন নিষিদ্ধ এবং অস্ত্র ক্রেতার বয়সসীমা ২১ বছরে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।