বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করলে নিয়ন্ত্রণ থাকবে রাশিয়ার হাতেই। অস্ত্র মোতায়েন জোরদারে মস্কোর এ ঘোষণায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন ইউক্রেন ও পশ্চিমাদেশগুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে কিয়েভকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করা পশ্চিমাজোটকে সতর্ক করল ক্রেমলিন।
৯০ দশকের পর প্রথমবারের মতো নিজ ভূখণ্ডের বাইরে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র মোতায়েন করতে যাচ্ছে রাশিয়া। চলমান যুদ্ধে রাশিয়াকে প্রত্যক্ষ সমর্থন দেয়া বেলারুশে শনিবার (২৫ মার্চ) কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন পুতিন। কিন্তু কেনো মিত্র দেশে অস্ত্র মোতায়েন করবে রাশিয়া? এর নিয়ন্ত্রণই বা কার কাছে থাকবে এ প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানায়, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন না করে, আগামী জুলাইয়ে বেলারুশে একটি অস্ত্র সংরক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা জানিয়েছে মস্কো। সেখানে অস্ত্র মোতায়েনের পর নিয়ন্ত্রণ থাকবে রাশিয়ার হাতেই।
যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে মিত্র দেশগুলোর ভূখণ্ডে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে দাবি জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়ারও এক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব এলাকায় ইউক্রেনের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা সম্ভব নয় কিন্তু বেলারুশ সীমান্তের কাছে হওয়ায় সেখান থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে এমন সিদ্ধান্ত মস্কোর। এমনকি যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করা পশ্চিমাজোটকে সতর্ক করা হলো বলেও মনে করেন তারা।
মূলত বিশ্বে মিত্রদেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও বেলারুশকে ভাই ভাই বলেও অভিহিত করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর ৯০’র দশক থেকেই রাজনৈতিক ও জাতিগত দিক থেকে দু’দেশকে এক করে দেখেন বিশ্লেষকরা। বিভিন্ন সময় নানা বিষয়ে একে অপরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনের মধ্য দিয়ে দুদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও স্পষ্ট হয়।
এদিকে, গেল ২৮ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল থাকা আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর গত ২০২০’র নির্বাচন ঘিরে কারচুপির অভিযোগ উঠলেও তাতে সমর্থন দেয় পুতিন সরকার। সে সময় বেলারুশের রাজনৈতিক হালচাল পুতিন নিয়ন্ত্রণ করেন বলে দাবি ওঠে।
সবশেষ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগেই মাসব্যাপী বেলারুশের সঙ্গে ব্যাপক আকারে যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়ে যুদ্ধের বার্তা পাঠায় রাশিয়া। যুদ্ধে রুশ সেনারা বেলারুশ দিয়েই ইউক্রেনে প্রবেশ করে বলেও জানায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। পরবর্তীতে সামরিক অভিযানের গতি বাড়াতে ঘাঁটি হিসেবে রাশিয়াকে নিজ দেশের ভূখন্ড ব্যবহার করতে দেয়ারও ঘোষণা দেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট। রাশিয়া-বেলারুশ সীমান্তে কিয়েভ যদি হামলার সিদ্ধান্ত নিলে বেলারুশ সেনারা যুদ্ধে যোগ দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।