Homeআন্তর্জাতিকরমজানে যে প্রভাব ফেলবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

রমজানে যে প্রভাব ফেলবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

বছর ঘুরে আবারও হাজির পবিত্র মাহে রমজান। ইবাদত-বন্দেগি ও সিয়াম সাধনার এ মাস নিশ্চিতভাবেই মুসলিম বিশ্বের জন্য অপরিমেয় আনন্দ বয়ে এনেছে। সেই সঙ্গে এনেছে কিছুটা হতাশা ও দুশ্চিন্তাও। আর সেই হতাশার কারণ ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি তথা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম এরই মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির চাপে কাহিল। লাগামহীন দ্রব্যমূল্য তাদের রোজা পালনে বেশ প্রভাব ফেলবে। ক্রয়ক্ষমতার অভাবে অনেকেই পর্যাপ্ত খাদ্য কিনতে পারবেন না। ফলে ঠিকমতো সেহরি ও ইফতার হবে না।

এমনকি অনেক মা-বাবাই তাদের প্রিয় সন্তানদের জন্য নতুন জামা-কাপড়ও কিনে দিতে পারবেন না। তবে এসব সংকটের মধ্যেও এই রমজান শতধাবিভক্ত মুসলিম সম্প্রদায়কে কাছাকাছি আনবে বলে প্রত্যাশা।

মূলত করোনা মহামারির প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা দুর্যোগের পর সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকা আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্য ও গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ঘাটতির কবলে পড়েছে। এই অঞ্চলগুলোতেই বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিমের বসবাস।

ফলে এসব মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এই রমজানে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের ৭৯টি দেশে–চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে রয়েছে–এমন মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৪ কোটি ৯০ লাখ। এ সময় খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন ছিল কমপক্ষে ১৪ কোটি মানুষের। ২০২৩ সালের শুরুতে এই সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই রাতারাতি বদলে যায়নি।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) অর্থনীতিবিদ ফ্রেডেরিক গ্রেব আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি লাখ লাখ পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের খরচ কমাতে বাধ্য করেছে। তার কথায়, ‘এ মুহূর্তে আপনি যদি গরিব হন, তাহলে আপনাকে আপনার আয়ের শতকরা কমপক্ষে ৫০ ভাগের বেশি ব্যয় করতে হবে খাদ্যের জন্য।’

রমজানে খাদ্য ও পানীয়র মূল্য চোকাতে পরিবারগুলোকে প্রচলিত খাবার যেমন: খেজুর, কেক, বিস্কুট ও বিভিন্ন রকম জুসের খরচ কমাতে হবে। অথবা এগুলোর বিকল্প হিসেবে সস্তায় কী পাওয়া যায় তারা সেটা খুঁজবে।

এর ফলে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অন্য স্থানের মতোই মধ্যপ্রাচ্যেও এর ধাক্কা লেগেছে। এরই মধ্যে নানা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ধনী এ দেশগুলোতেও মানুষের হাতে টাকা নেই।

১২ বছর আগে গৃহযুদ্ধ শুরু হলেও সিরিয়ার শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মানুষ বসবাস করছে দারিদ্র্যের নিচে। তার ওপর তাদের আঘাত করেছে ৬ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্প। তুরস্ক ও সিরিয়া মিলিয়ে এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ।

এর ফলে দেশদুটির কয়েক কোটি মানুষ এক কঠিন সময় পার করছে। তুরস্কে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে শতকরা ৫৫ ভাগ। মিশরে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুতগতিতে। ফেব্রুয়ারিতে তা শতকরা ৩২ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। যদিও দেশটির সরকার রমজান উপলক্ষে দরিদ্রদের জন্য কম মূল্যের বাজার খুলেছে।

তবে লেবাননের মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে যে সংকটের মুখে তা অন্য কোনো দেশে নেই। এই সংকট রমজানে আরও দৃশ্যমান হবে। দেশটি এমনিতেই চার বছর ধরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটে ডুবে আছে। দেশটিতে কাজ করে প্রথম সারির একটি দাতব্য সংস্থা আমেরিকান নিয়ার ইস্ট রিফিউজি এইড।

তারা বলেছে, লেবাননে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের ইফতার জোগাড় করার সক্ষমতা থাকবে না। ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে লেবাননের পাউন্ডের পতন হয়েছে শতকরা ৯৮ ভাগ।  লেবাননে খাদ্য অনিরাপত্তায় ভুগবে ১৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষ, লেবাননে আশ্রয় নেয়া ৮ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী।

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কেয়ার লেবাননের মুখপাত্র প্যাট্রিসিয়া খোদের বলেন, জনগণ খাদ্য সংগ্রহের পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। তারা দিনশেষে মুদি দোকানে যান। যা পড়ে থাকে, তা-ই সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। যদি তাদের খাদ্য কেনার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চাল ধার করেন।

পাকিস্তানেও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছেই। দেশটিতে জনসংখ্যা কমপক্ষে ২০ কোটি। সেখানে অর্ধশতাব্দীর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ। এর সঙ্গে গত বছর ছিল ভয়াবহ বন্যা। যে এলাকায় বন্যা হয়, তা চেক প্রজাতন্ত্রের চেয়েও বড়।

কয়েক মাস ধরে এই বিশাল অঞ্চল ছিল পানির নিচে। ফলে সেখানে খাদ্যসংকট ভয়াবহ হয়েছে। রাজধানী ইসলামাবাদের বুরহান বলেছেন, যদি তার ছয় সন্তান দিনে একবারও খাবার পায়, তবু আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাবেন। কয়েক মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতি শুধু বাড়ছেই।

সর্বশেষ খবর