বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের শেষ ছবিটা কখনো ভুলতে পারবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো? শিরোপাস্বপ্ন নিয়ে কাতারে এসে একাদশে জায়গা হারানো, এরপর মরক্কোর বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমে হারের সাক্ষী হওয়া। কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়া রোনালদো যেন সেদিন জীবনের শেষ যুদ্ধে হেরে যাওয়ার গ্লানিতে পুড়ে যাওয়া ফিল্ড মার্শাল।
একযুগের বেশি সময় ধরে পর্তুগালের নেতৃত্ব রোনালদোর কাঁধে। অজস্র অভিযানের নায়ক কাতার অভিযানে নেমেছিলেন অধরা বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ের আকাঙ্ক্ষায়। কিন্তু যুদ্ধে নেমে আবিষ্কার করলেন তিনি আর কেন্দ্রীয় চরিত্রই নন। পর্তুগালের প্রথম একাদশে নেই রোনালদোর নাম! -গত এক দশকে এমন দৃশ্য কল্পনাও করা যায়নি। এরপর তো কোয়ার্টার ফাইনালে হারা রোনালদোর অশ্রুসিক্ত চোখে টানেল ধরে বেরিয়ে যাওয়া। গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ থেকে একজন অলটাইম গ্রেটের এমন রিক্ত হাতে বিদায় তো শেকসপিয়ারের ট্রাজেডির চেয়ে কম হৃদয়বিদারক নয়।
সময় গড়িয়েছে অনেক। রোনালদো ইউরোপ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবে। যোগ দিয়েছেন নতুন ক্লাবে। পর্তুগালে ফিরেছেন এবার জাতীয় দলের জার্সি চাপিয়ে ইউরো বাচাই পর্বের ম্যাচ খেলতে। ক্যারিয়ারের ওই বাজে সময়টা অবশ্য ভোলেননি। এত দিনে মুখ খুলেছেন খারাপ সময় নিয়ে।
এরিক টেন হ্যাগ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেওয়ার পরই রোনালদোর ক্যারিয়ারের উল্টোযাত্রা শুরু। টেন হ্যাগের দলের একাদশে জায়গা হারান। এরপর তো সেই আলোচিত সাক্ষাৎকারে কোচ, মালিকপক্ষ আর ক্লাবের পরিবেশ নিয়ে বিতর্কিত কথা বলায় ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হয় তার। বিশ্বকাপেও নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। সে সময় সমালোচনা কম হয়নি। এমনকি প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর সামর্থ্য নিয়েও।
কথায় আছে, দুঃসময়ে মানুষ চেনা যায়। মানুষ চিনেছেন রোনালদোও। কারা তার কাছের মানুষ তা এই খারাপ সময়েই চিনেছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। বাজে সময়টা নিয়ে তিনি বলেন, ‘কে তোমার পাশে আছে, সেটা দেখার জন্য এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মাঝেমধ্যে যেতে হয়। কঠিন সময়েই বোঝা যায় কে পাশে আছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই, ক্যারিয়ারে খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছি, এ নিয়ে অনুশোচনা নেই। জীবন চলে যায়, ভালো খারাপ যাই করি, আর এটা আমার অভিযাত্রার একটা অংশ।’
ক্লাব বদল নিয়েও কম কথা শুনতে হয়নি তাকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, য়্যুভেন্তাস মাতানো তারকা নাকি দল পাচ্ছিলেন না। অবশেষে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে থিতু হয়ে নতুন করে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তবে সমালোচনা থামেনি। ইউরোপের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল ছেড়ে সৌদি আরবের অপেক্ষাকৃত দুর্বল লিগে যাওয়ার কারণে অনেক সমালোচনা তাকে নিয়ে।
তবে সমালোচনায় কান দিচ্ছেন না রোনালদো। বরং নিজেকে আগের চেয়ে বেশি প্রস্তুত মনে করছেন তিনি, ‘পাহাড়ের ওপর থেকে অনেক সময় বোঝা যায় না যে, নিচে কী আছে। আমি এখন আগের চেয়ে বেশি প্রস্তুত, এই শিক্ষাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত কয়েক মাসে যা ঘটেছে, এমন কিছু আমার সঙ্গে কখনো ঘটেনি। এটা আমাকে আরও ভালো মানুষও বানিয়েছে।’