ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর সদরের পশ্চিমপাড়ায় গোবর্ধন দাসের বাড়িতে থাকা দুর্গামন্দির এবং পুরোহিতের রান্নাঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ১৩ আসামির প্রত্যেককে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ২ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে আসামিদের উপস্থিতিতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ পারভেজ এ রায় দেন।
মামলার বিবরণ এবং আদালত সূত্রে জানা যায়, ‘গত ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর সদরের পশ্চিমপাড়ায় গোবর্ধন দাসের বাড়িতে পুরাতন দুর্গামন্দির এবং পুরোহিতের রান্নাঘর রাতের আধারে পুড়িয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। এতে মন্দিরের মূল্যবান জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে নাসিরনগর থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার তিনদিন পার হওয়ার পরেও ভুক্তভোগীদের কেউ ভয়ে থানায় মামলা করেনি। পরে ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রেরপক্ষে মামলা দায়ের করেন তৎকালীন নাসিরনগর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক সাধন কান্তি চৌধুরী। মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
ঘটনার ৬ বছর পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্যাট মো. মাসুদ পারভেজের আদালত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ১৩ আসামির প্রত্যেককে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ মাসের কারাদণ্ড দেন। এ সময় ১৩ জন আসামির মধ্যে ৮ আসামি উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত আসামিরা হলেন: কামারগাঁও গ্রামের মোখলেছ মিয়া ও ইদু মিয়া, কুণ্ডা ইউনিয়নের মছলন্দপুর গ্রামের খসরু মিয়া, পশ্চিম পাড়া এলাকায় নাজির রহমান ও মো. মাহফুজ মিয়া এবং মীর কাশেম, ঘোষপাড়া এলাকার শেখ মো. আব্দুল আহাদ ও আশুরাইল বেনীপাড়ার সজীব চৌধুরী।
পলাতক আসামিরা হলেন: পশ্চিমপাড়া এলাকার মো. মফিজুল হক, সায়হাম রাব্বী শ্যাম, তোবারক রেজা, আনন্দপুর গ্রামের আনিস মিয়া এবং হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের দিন থেকে সাজা কার্যকর হবে।
এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ মামলার ১৩ আসামির মধ্যে ৮ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন; বাকি ৫ জন পলাতক রয়েছেন। তাদের সবাইকে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এ মামলায় ১১ জন সাক্ষী দিয়েছেন। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত এ রায় দেন। রায়ের মধ্যদিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম কামরুজ্জামান মামুন বলেন, ‘তথ্য প্রমাণ ছাড়া মামলায় এমন সাজার নজির বাংলাদেশে নেই। এ মামলায় বাদীসহ ১৫ জন সাক্ষী দিয়েছেন। এরমধ্যে কেউ কারো নামও বলেননি। তথ্য প্রমাণ ছাড়া এমন ফরমায়েশী রায়কে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এ মামলায় আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। সেখানে আমরা ন্যায়বিচার পাবো বলে আশা করছি।’