কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলেই এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব খেলেছিল বাংলাদেশ। বেশি বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে ইরানের বিপক্ষে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হতে পারত।
বলা হয়েছিল, র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দেশের সঙ্গে বেশি করে ম্যাচ খেলানো হবে। তবে সেই কথা রাখতে পারছে না বাফুফে। এদিকে ভারত তাদের নারী ফুটবল এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ২৪ বছরের পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হারাতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব।
সৌদি আরবে যখন অনুশীলন করছে জামাল ভূঁইয়ারা, তখন নানা সীমাবদ্ধতায় মার্চ উইন্ডোতে ম্যাচ না খেলে বাফুফেতেই সময় কাটাচ্ছেন সাবিনারা। অথচ সাফল্য এনে দেয়ায় এগিয়ে থাকা মেয়েদের একটু সুযোগ দিলে কতটা প্রমাণ করতে পারে ওরা, তা সবারই জানা।
ছেলেরা উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সৌদি আরবে যেতেই পারে। তাতে দোষের কিছু নেই। তবে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব এনে দেয়া মেয়েরা কেন বারবার বঞ্চিত, সে প্রশ্নে সঠিক উত্তর মেলেনি।
গুঞ্জন রয়েছে, টাকার অভাবে সিঙ্গাপুর ও ভারতে বহুজাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে পাঠায়নি বাফুফে। ইরানের সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে নজর দিন। বাংলাদেশের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ৭২ ধাপ এগিয়ে থাকা ইরানের বিপক্ষে ম্যাচের ৮৫ মিনিট পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছেন শামসুন্নাহাররা।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচটিতে পেরে ওঠেনি টাইগ্রেসরা। ইরানের নারী ফুটবলারদের জন্য বাজেট আর বাংলাদেশের নারী ফুটবল বাজেটের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল ফারাক। শুধু থাকার জায়গার অভাবে ক্যাম্প ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশের অনেক নারী ফুটবলারকে।
একটু নজর দিলে দেখা যাবে, তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটায় সহজ কিছু ভুল না করলে আরও ৩-৪টি গোল দিতে পারত মেয়েরা। ম্যাচের ফল তখন ৪-০ থাকত না। ইরানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তখন আরও আত্মবিশ্বাস পেত মেয়েরা। সেই ব্যর্থতার কারণ হিসেবেও প্র্যাকটিস ম্যাচ না খেলাকে দেখা হচ্ছে।
যদি দেশ কিংবা দেশের বাইরে আরও ম্যাচ খেলতে পারা যেত, তাহলে হয়তো এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারত মেয়েরা।
গেল বছর র্যাঙ্কিংয়ে ঢের এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে হারিয়ে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা এই দলটাকে এশিয়ার সেরা দলগুলোর সঙ্গে খেলিয়ে বিশ্বমানের করার তাগিদ দিয়েছেন হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তিনি বলেছেন, ভালো করতে চাইলে বেশি বেশি ম্যাচ খেলার কোনো বিকল্প নেই। তবে ছোটনের সেই তাগিদ বাস্তবে রূপ পায়নি।
২০১০ সালে ইরানের বিপক্ষে ৬-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার মাত্র ১-০ গোলে। ১৩ বছরে কতটা এগিয়েছে বাংলার মেয়েরা, তা এই স্কোরলাইনই বলে দেয়। ভারত তাদের ফুটবলে উন্নতির জন্য ২৪ বছরের একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। বাংলাদেশের নেই দীর্ঘ কোনো পরিকল্পনা। ফুটবল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে হয়তো প্রতিভা নষ্ট হতে সময় লাগবে না।