তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার কোনো প্রশ্নই আসে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (১৫ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক দুটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কিংবা কোনো সংলাপে যাবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে না। তারা আওয়ামী লীগের অধীন নির্বাচনে যেতে চাইলেও সেই সুযোগ নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংলাপের দরকার নেই। আমরা তাদের সংলাপে ডাকিনি। কাজেই আমরা ডাকলে তারা বলতে পারতো, সংলাপে যাবে কি-যাবে না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার কোনো প্রশ্নই আসে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচনকালীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব পালন করবে। যেভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রে অন্য দেশগুলোতে নির্বাচন হয়, সেভাবেই জাতীয় নির্বাচনের সময়ে চলতি সরকার দায়িত্ব পালন করবে। এ প্রশ্নে সংলাপ করার প্রশ্নই আসে না।’
জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বাণিজ্য করে বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে ৩০০ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছিল ৯০০টি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি।’
নিজের নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রথমে দেখলাম একজন মনোনয়ন পেয়েছেন। পরে দেখি, সেটি উল্টে গেছে। আরেকজন পেয়েছেন। তারপর দেখলাম ধানের শীষ বিক্রি করে দিয়েছে। অর্থাৎ এলডিপিকে দিয়ে দিয়েছে।’
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘ধানের শীষ এলডিপিকে দেয়ায় বিএনপির নারী কর্মীরা ঝাড়ু মিছিল পর্যন্ত করেছে। এ দৃশ্য আমার নির্বাচনী এলাকাতেই।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘গত নির্বাচনে সব আসনেই বিএনপি এভাবে মনোনয়ন বেচাকেনা করেছে। একটি মনোনয়ন দেন তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেন আরেকটি, রুহুল কবির রিজভীও দেন একটি। এরপর তিনজনের টানাটানিতে যেটি টিকে, সেটি হচ্ছে চূড়ান্ত। এগুলো তাদের নির্বাচনে খারাপ ফল করার পেছনে বড়ো প্রভাব ফেলেছে।’
‘আমাদের দলে (আওয়ামী লীগ) পরীক্ষিত নেতাকর্মী যাদের জনপ্রিয়তা আছে, তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়। ১৯৯১ সালে অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেয়ার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন; কিন্তু না পেয়ে বিএনপিতে গেছেন। পরে তারা বিএনপির মন্ত্রীও হয়েছেন’, যোগ করেন মন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি আদর্শিক দল। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত আমলা কিংবা বড়ো ব্যবসায়ীদের আমরা মনোনয়ন দিই না। অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে গিয়েছিল। যাদের মধ্যে এমকে আনোয়ারসহ আরও বেশ কয়েকজন আছেন। তারা মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে মন্ত্রী হন। ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের চর্চা বিএনপিই করে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সৃষ্টি হয়েছিল ক্ষমতার হালুয়া-রুটি বণ্টন করে। রাস্তায় যখন হালুয়া-রুটি ছড়িয়ে দেয়া হয়, তখন কাক যেমন জড়ো হয়, তেমনি রাজনীতিতেও কাক আছে। রাজনীতির কাকদের নিয়েই বিএনপির সৃষ্টি। মির্জা ফখরুল, রিজভী, খন্দকার মোশাররফ অন্য দল করতেন। রাজনীতির কাকদের নিয়ে বিএনপির সৃষ্টি। এ কারণে তাদের মধ্যে কোনো আদর্শ নেই। তারা পদ বাণিজ্যও করে।’