সাইদুজ্জামান রেজা, পঞ্চগড়।।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও দুইটি মামলা নিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো ২৫টি। এসব মামলায় গত ২৪ ঘন্টায় আরও তিন জনসহ মোট ১৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২৫ টি মামলার মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানায় ২০টি এবং বোদা থানায় ৫টি। এসব মামলায় নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ১০ হাজারেরও অধিক।
মঙ্গলবার সকালে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে, সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখন জেলা জুড়ে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। গ্রেপ্তার আতঙ্কে জেলা সদরের আহমদ নগরের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ও বোদা উপজেলার বেশকিছু গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশের পাশাপাশি গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে র্যাব ও বিজিবি।
তবে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে প্রকৃত জড়িত ব্যক্তি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে, আহমদ নগর এলাকায় পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ঘটনার আটদিন পরেও ফিরেনি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারীরা। এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে আহমদ নগরসহ আশপাশের এলাকায়। খোলা আকাশের নিচে সেখানে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা।
অনেকে জলসা মাঠে তাঁবু টানিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার মাঠের পাশে জামেয়া আহমদিয়া বাংলাদেশ অফিসে আশ্রয় নিয়েছেন।
এর আগে, গত ৩ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় পঞ্চগড়। জুমআর নামাজের পর আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ।
বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌড়ঙ্গী মোড়ের দিকে আসতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে তাদের সাথে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশের উপর হামলা করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশও অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর মধ্যেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়া আহমদিয়াদের বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এঘটনায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একজন এবং মুসল্লীদের মধ্যে একজন নিহতও হন। পরে রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, পরদিন শনিবার সন্ধার পর ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে’- এমন গুজবকে কেন্দ্র করে আবারও হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় মোট ২৫ টি মামলা রুজু হয়েছে। রোববার সকাল পর্যন্ত মোট ১৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে। আসামি গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য, বিভিন্ন স্টিল ছবি যাচাই-বাছাই করে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।