ইউক্রেনে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) রাতে ৯৫টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেন ঠেকাতে পেরেছে। বাকিগুলো দেশটির বিভিন্ন শহরের আবাসিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানে। রাশিয়া এসব ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে বিভিন্ন জায়গা থেকে। যুদ্ধবিমান, জাহাজ এবং রাশিয়ার বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়।
ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ ভ্যালেরি জালুঝনি বলেছেন, বৃহস্পতিবার ভোরে ছয়টি ভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন সাবসনিক, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র। রাশিয়া বিভিন্ন যুদ্ধবিমান থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালায়। এগুলোই মূলত ইউক্রেনের সমরবিদদের নজর কেড়েছে বেশি। এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আটকানো সত্যিই অনেক কঠিন।
মার্কিন থিংকট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) এর তথ্যানুসারে, ইউক্রেনে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় গত বছরের মার্চে এবং মাঝে মাঝেই তা ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও এ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালাল রাশিয়া।
কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রটি শব্দের গতির চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি দ্রুত চলতে পারে। ফলে এটি শনাক্ত করা কঠিন। আরও কঠিন হয়ে পড়ে মিগ-৩১ এর মতো যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উৎক্ষেপণ করা হলে। এ দুই কারণে ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা এবং নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এ ক্ষেপণাস্ত্রটি একাধিক দিক থেকে আক্রমণ করতে পারে এবং এটি লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছেও লক্ষ্যবস্তু বদল করে অন্য কোথাও আঘাত হানতে সক্ষম।
রাশিয়ার এমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে দেশটি স্টকে আর কি পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষ করে কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এর জবাব দিয়েছে সিএনএন। মার্কিন এ সম্প্রচারমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার কাছে অন্তত আরও ৫০টি কিনঝাল রয়েছে।
ফলে এক রাতেই ৬টি কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে রাশিয়া কেন তার স্টক ফুরাচ্ছে সে নিয়েও প্রশ্ন আছে। তবে সে প্রশ্নেরও জবাব আছে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের ফেলো জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেছেন, ‘রাশিয়ানরা ক্ষেপণাস্ত্র কমে যাওয়ার পরও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে কারণ মস্কো প্রতি মাসে প্রায় ৪০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম।’ ফলে এটি স্পষ্ট যে, প্রতি মাসে বিপুল সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার জন্য বিলাসিতা নয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাশিয়ার এমন হামলার জবাবে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী কতটা কার্যকর। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা আলেক্সান্দর রডনিয়াস্কি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে মোটেও ভালভাবে দাঁড়াতে পারেনি।’
আলেক্সান্দর রডনিয়াস্কি বলেছেন, ‘তারা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে। তারা নতুন ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করছে এবং তারা পরীক্ষা করে দেখেছে যে, আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে সেটির মোকাবেলা করে। তারা দেখতে পেয়েছে যে, আমরা যথেষ্ট ভালভাবে মোকাবিলা করতে পারছি না।’