গ্রাম ও কৃষি সবকিছু স্মার্ট হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে। এখন নিভৃত গ্রামেও ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। কেননা সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০৪১ সালে আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
শনিবার (১১ মার্চ) ময়মনসিংহে ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৩০টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপিসহ তথাকথিত বিরোধীদলগুলো বলে আওয়ামী লীগ সরকার নাকি কিছুই করেনি। আমাদের সময়ে গড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে ঠিকইতো তারা সরকারের সমালোচনা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ না দিলে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেন কী করে; প্রশ্ন আমার।’
বিএনপির মিথ্যা বলাই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির এক নেতা সারাদিন মাইকে বলেন, আমরা নাকি দেশ ধ্বংস করেছি। এখানে উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো কি ধ্বংসের জন্য? আসলে তাদের কাজই হলো মিথ্যা বলা। বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা বাড়াই বিএনপি কমায়। এখন বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। আমরা চাই, সব ঘর আলোকিত হোক। আসলে লুটপাট, চুরি আর মিথ্যা বলাই বিএনপির অভ্যাস।’
সমাবেশে দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মোটকথা আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ আমরা কারো কাছে হাত পাততে চাই না, আর ভিক্ষা করতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমার নিজের আওতায় যত জমি আছে তাতে চাষ করেছি। আপনারাও নিজেদের জমির এক ইঞ্চিও খালি রাখবেন না। আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি, তাহলে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেও খাওয়া-পরা চলবে। আমরা সমস্যায় পড়ব না।’
আমিষের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, আবাদি জমির পাশাপাশি আমাদের জলাভূমিকেও ব্যবহার করতে হবে। মাছের চাষের মাধ্যমে জলাভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষি ও কৃষকের জন্য বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় বিদেশি সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘আপনি কীভাবে, কী করবেন’। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমার দেশের উর্বর মাটি ও মানুষ দিয়েই আমরা ঘুরে দাঁড়াব’।”
এ সময় প্রধানমন্ত্রী যুব সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের যুব সমাজকে উন্নয়নের অংশীদার হতে হবে। আমরা যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করেছি। যুবকরা এসব সুযোগ নেয়ার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের কর্মস্থলের পাশাপাশি আরও মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন।
এরআগে বিকেল আড়াইটার দিকে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশ মঞ্চে এসে পৌঁছান। পরে ৩টার দিকে মোট ১০৩ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে ৭৩ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩০টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন জায়গায় ছবির ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ময়মনসিংহ সদরের চর সিরতায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, ত্রিশাল উপজেলায় এক হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, ময়মনসিংহ জেলায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ের চরআলগী ইউনিয়নকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে রক্ষার্থে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় গোরবাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর, জেলা আইনজীবী সমিতির মূলভবন শহীদ অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ভবন ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ উদ্বোধন।