কৃষিখাত দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে শাসক গোষ্ঠী লুটপাট তন্ত্র কায়েমের মধ্য দিয়ে কৃষিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র কমিটির সমন্বয় কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী। বগুড়ায় সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের প্রথম কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শনিবার বেলা ৩ টায় বগুড়ার পৌর পার্কে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তরিকুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, সমন্বয়ক, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরাম, আরো বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মনজুর আলম মিঠু, সদস্য কৃষিবিদ ওবায়দুল্লাহ মুসা,তারকেশ্বর নান্টু,আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষরাই সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত।অধিকাংশ ক্ষুদ্র,মাঝারি কৃষক মৌসুমে ফসল বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারে না। মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে কম মূল্যে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কিন্তু প্রতি বছর দেশি বিদেশি কোম্পানির মুনাফার স্বার্থে সার, বীজ, কীটনাশক, ডিজেল, বিদ্যুৎসহ কৃষি উপকরণের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষেতমজুরদের এমনিতেই বছরে ৯ মাস কাজ থাকে না ফলে সারা বছর কাজ ও খাদ্যের নিশ্চয়তা নেই। সরকার কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছে না। উপরন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চিনিকলসমূহ আধুনিকায়নের পরিবর্তে বন্ধ করে দেশের শিল্প ধ্বংস করছে আর তথাকথিত যন্ত্রিকরনের নামে কৃষিতে পুঁজিপতিদের সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ভূমি সেটেলমেন্ট, তহশীল অফিস, ব্যাংক, থানা- পুলিশসহ সরকারি অফিস সমূহে ঘুষ-দুর্নীতি -হয়রানি, শিকার এবং এনজিও ও মহাজনি ঋণের জালে জিম্মি হচ্ছে কৃষক ক্ষেতমজুরসহ সাধারন মানুষ। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ লুটপাট করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও অসৎ কর্মকর্তারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৫২ বছরে দেশের শাসন ক্ষমতাবান যখন যে দল এসেছে সকলেই জনগণের স্বার্থের বিপরীতে ব্যবসায়ী- পুঁজিপতি শ্রেণির পক্ষে কাজ করেছে ফলে দেশের অধিকাংশ মানুষ সহায় সম্পদ হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ভোটডাকাতির সরকারের ফ্যাসিবাদ দুঃশাসন ও লুটপাটের ফলে জনজীবন আরো বিপর্যস্ত। নেতৃবৃন্দ দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় শ্রমিক-কৃষক-ক্ষেতমজুর- মেহনতি মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং সেই আন্দোলনে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
এরপর গত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি, সমাজতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট, এর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে অধ্যাপক তরিকুল আলম কে সভাপতি ও মনজুর আলম মিঠু কে সাধারন সম্পাদক করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট নব গঠিত গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ঘোষনা করা হয়।
এর আগে সকাল ১১ টায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সহস্রাধিক নেতা কর্মীদের এক সুস্বজ্জিত র্্যালী কৃষক,ক্ষেতমজুরদের দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও লাল পতাকা হাতে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পৌর পার্কে মিলিত হয়।