জাতীয় পরিচয়পত্র পকেটে নিয়ে ঘুরছেন জয়পুরহাটের সামছুল হক (৬৪), অথচ বিভিন্ন কাজে এনআইডি সাবমিট করলেই দেখাচ্ছে তিনি মৃত। শুধু তা-ই নয়, ছবির জায়গায় নেই তার ছবি। ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়ার পর থেকে এ সমস্যা নিয়ে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ২২ ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। ভুক্তভোগী বলছেন, নিজে শিক্ষিত না হওয়ায় যেভাবে বলছে, সেভাবে করেছি। কিন্তু এখনও ভোগান্তি থেকে মুক্তি মেলেনি।
সামছুল হক জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বীরনগর আটুল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষিকাজের পাশাপাশি মুদি দোকান চালান। রোববার (৬ মার্চ) দুপুরে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচন অফিসে এসেছিলেন তিনি। এদিনও তাকে শুকনোমুখে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে।
সামছুল হক জানান, ২০০৮ সালে যখন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতে পান, সেখানে সব সঠিক থাকলেও ছবি ভুল ছিল। তার ছবির স্থলে এলাকার দেবখণ্ডা দীঘিরপাড় আদর্শ গ্রামের মো. তহির উদ্দিনের ছবি ছিল। আর তহিরের এনআইডিতে সামছুলের ছবি ছিল। এ নিয়ে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন তারা। তখন তহির ও তিনি একসঙ্গে যাওয়ায় ভোট দিতে দেয়া হয়েছিল।
গুরুত্বপূর্ণ ২২ ধরনের সেবার ক্ষেত্রে এখন জাতীয় পরিচয়পত্রের দরকার পড়ে। এসবের কিছুই পাচ্ছেন না সামছুল হক।তিনি জানান, ২০১৮ সালে ছবি পরিবর্তনের আবেদন করেছিলেন। এখানও পরিবর্তন হয়নি। এদিকে প্রায় এক বছর আগে দেবখণ্ডা দীঘিরপাড় আদর্শ গ্রামের মো. তহির উদ্দিন মারা যান। তখন সামছুল হককেও জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত দেখানো হয়। বিষয়টি জানতে পেরে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করেন। এই আবেদনের পর তাকে মৃত থেকে জীবিত দেখানো হয়। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি এনআইডির ছবি পরিবর্তনের জন্য আবার আবেদন করেন। এর আগে ২০১৪ সালে সামছুল হক নতুন ভোটার হওয়ার জন্য ছবিও তুলেছিলেন।
সামছুল হক বলেন, ‘আমি নিজে এতটা বুঝি না। ২০০৮ সালের পর থেকে ছবি পরিবর্তনের জন্য যে যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই চেষ্টা করেছি। এখনও ছবি পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রায় ১৫ বছর আমি কোনো জমি কেনা, ব্যাংক ঋণ নেয়া, মোবাইল সিম তোলাসহ নানান কাজ করতে পারছি না। এবার ছবি পরিবর্তন না হলে আর কখনো চেষ্টা করব না।’
এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এনআইডিতে মৃতের যে বিষয়টি ছিল, তা সংশোধন করা হয়েছে। এখন ছবি পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা আছে। এটি ঢাকা কার্যালয় থেকে যাচাইয়ের জন্য ক্যাটাগরি করে জেলা নির্বাচন কার্যালয় বা বিভাগীয় কার্যালয়ে দেবে। এরপর যাচাই করে ছবি পরিবর্তন করা হবে।’