অ্যানফিল্ডে কাটানো গতকাল রাতটা হয়তো ভুলেই যেতে চাইবেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলোয়াড়রা। কারণ ঘরের মাঠে রেড ডেভিলদের পেয়ে যে রীতিমতো বিধ্বস্ত করে ছেড়েছে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। একবার দুইবার নয়, পুরো ম্যাচে ইউনাইটেডের জালে মোট সাতবার বল জড়িয়েছে লিভারপুল।
পুরো ম্যাচজুড়েই লিভারপুল যেন ছেলেখেলা করেছে ইউনাইটেডের রক্ষণভাগের সঙ্গে। অবশ্য শুরুর দিকে ইউনাইটেডও কিছুটা আক্রমণে ছিল। কিন্তু ৪৩ মিনিটে কোডি গ্যাকপোর গোলের পরেই যেন বদলে যায় দৃশ্যপট। ক্ষ্যাপাটে হয়ে গোল খুঁজতে শুরু করে লিভারপুল। আর তাতেই দিশেহারা এরিক টেন হাগের দল।
১-০ গোলের লিড নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে দুই মিনিটের মাথায় ডারউইন নুনেজের গোলে ব্যবধান বাড়িয়ে ফেলে লিভারপুল। এই গোলের তিন মিনিটের মধ্যেই নিজের দ্বিতীয় গোল করেন গ্যাকপো। পরের গোলটা আসে সালাহর পা থেকে, ৬৬ মিনিটে। মাত্র ২১ মিনিটেই তিন গোল হজম করে যখন একেবারেই ব্যাকফুটে রেড ডেভিলরা, তখন আরও একবার আঘাত হানেন সালাহ।
খুব একটা মায়া অবশ্যই নেই লিভারপুল স্ট্রাইকারদের। এমন বিপর্যস্ত দলকে এরপরেও আক্রমণে ওপর রেখেছে তারা। আর গোল খেয়ে দিশেহারা ইউনাইটেড ততক্ষণে রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত। এর পরেও ৮৩ মিনিটে স্কোরশিটে নাম লিখিয়ে দ্বিতীয় ও দলের ষষ্ঠ গোল পূর্ণ করেন সালাহ। ৮৮ তম মিনিটে শেষ পেরেকটা ঠুকেন রবার্তো ফিরমিনো। বড় হারের লজ্জা মাথায় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টেন হাগের দল।
বড়সড় এই পরাজয়ে রেকর্ড বুকেও নাম লিখিয়েছে ম্যানইউ। অলরেডদের বিপক্ষে এটিই রেড ডেভিলদের সবচেয়ে বড় হার। এর আগে সবচেয়ে বড় হারটি ছিল ৭-১ গোলের, ১৮৯৫ সালের অক্টোবর মাসে।
ইউনাইটেডের ফুটবল ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় পরাজয় এটি। একই ব্যবধানে অবশ্য আরও তিনবার হেরেছে রেড ডেভিলরা। তবে সেই সবগুলো ম্যাচেরই ৯০ এর বেশি বছর পেরিয়েছে।
১৯৩১ সালে সর্বশেষ ৭-০ গোলে হেরেছিল ম্যানইউ। সেবার তাদের প্রতিপক্ষ ছিল উলভস। ১৯৩০ সালেও একবার একই ব্যবধানে অ্যাস্টন ভিলার কাছে হেরেছে ওল্ড ট্রাফোর্ডের দলটি। ম্যানচেস্টারের দলটিকে প্রথমবার এই লজ্জায় ডুবিয়েছে ব্ল্যাকবোর্ন, ১৯২৬ সালে।
৭ গোল অবশ্য আরও একবার হজম করেছে ইউনাইটেড। তবে ১৯২৭ সালে নিউক্যাসেলের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ১টি গোল করেছিল রেড ডেভিলরা।
কোচ এরিক টেন হ্যাগেরও কোচিং ক্যারিয়ারে এটি সবচেয়ে বড় হার। ৪৮১ ম্যাচে কোচিং করিয়ে এতো বড় হার কখনো দেখেননি এই ডাচ কোচ।
অ্যানফিল্ডে ম্যানইউয়ের এই দুর্দশা অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ের নিয়মিত ঘটনা। এই মাঠে দুই দলের লড়াইয়ে সবশেষ ১৫ গোলই করেছে লিভারপুল।
এদিকে রেকর্ড বুকে নাম লিখিয়েছেন লিভারপুলের মিশরীয় ফরোয়ার্ড মোহামেদ সালাহ। ইউনাইটেডের বিপক্ষে জোড়া গোল করে তিনি পরিণত হয়েছেন প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোল করা খেলোয়াড়ে। ২০৫ ম্যাচে ১২৯ গোল করেছেন ফারাহ। রেকর্ড তিনি করেছেন আরও একটা। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ম্যানইউয়ের বিপক্ষে টানা ৬ ম্যাচে গোল করা প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নাম রেকর্ড বুকে তুলেছেন সালাহ।