বাংলার সিনেমার গণমানুষের নায়ক মান্নাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার স্ত্রী শেলী মান্না। জানিয়েছেন তার আবেগ আর জীবন-সংগ্রামের কথা। লম্বা স্ট্যাটাসে শেলী মান্না তুলে ধরেছেন মান্না ফাউন্ডেশন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য।
প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্নার স্ত্রী শেলী মান্না জানান, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, এক ভয়াবহ শোকাবহ দিনের পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল থেকেই আমার চারপাশের অনেক স্বজনের মানবিক চরিত্র চিত্রের বদল ঘটেছিল। শুরু হয়ে গিয়েছিল মানসিক ও আত্মসম্মান পীড়নের এক কঠিনতম সংগ্রাম। সেই সংগ্রাম তিনি এখনো করে চলেছেন। সেই সঙ্গে ‘মান্না ফাউন্ডেশন’র সদস্য হয়ে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কৃতাঞ্জলি চলচ্চিত্রের ফেসবুক পেজে।
শেলী মান্না লিখেন, মান্না চলে যাওয়ার পর শুরু হয় আমার জীবনযুদ্ধের সংগ্রাম। সেই সঙ্গে কাছের মানুষও চির অচেনা হতে থাকে। মান্নার জীবদ্দশায় সে মানুষের মানবিকতা ও আন্তরিকতা নিয়ে চরম সত্য কথাই বলে গিয়েছেন, যা এখন আমি বুঝতে পারি। আমরা আজ ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে রীতিমতো সোচ্চার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তরিকতা, ধর্ম ও ইমানের সঙ্গে কজনই বা পালন করে থাকি? এমন প্রশ্নও রেখেছেন সমাজের মানুষের কাছে।
কাছের মানুষের অসহযোগিতা থাকলেও নায়ক মান্নার প্রতি তার ভালোবাসায় গড়ে তোলেন মান্না ফাউন্ডেশন। ট্রাস্টি বোর্ড, কার্যকরী কমিটিসহ প্রায় ৪০ সদস্য বিশিষ্ট মিডিয়া ও সমাজের গণ্যমান্য উপদেষ্টাসহ ২০০৯ সালের এপ্রিলে পহেলা বৈশাখ এফডিসিতে মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল ‘মান্না ফাউন্ডেশন’। বাংলাদেশ জুড়ে ২৪৫টি অঙ্গসংগঠন তৈরি হয়। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এর কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও দেশে অস্থিরতার কারণে অনেকটা থমকে যায়। বর্তমানে আবারও শুরু হয়েছে সংগঠনটির কার্যক্রম।
এ প্রসঙ্গে শেলী মান্না বলেন, আমাদের ‘মান্না ফাউন্ডেশন’ যেভাবে কাজ করে যাচ্ছিল তার চেয়ে এখন অনেকধাপ এগিয়ে। আমরা নতুন করে সংগঠনটির সারাদেশের কার্যক্রম শুরু করেছি। সদস্য সংগ্রহ শুরু করেছি। এ ছাড়াও যারা দেশের বাইরে সংগঠনটির শাখা করতে চান তাদেরও আমরা সহযোগিতা করছি।
মান্না ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিংবদন্তি অভিনেতা প্রযোজক মান্নার অগণিত ভক্তকুল, সিনেমাপ্রেমী স্বজনের ও আমাদের দাবি ও ভালোবাসায় গঠিত হয়েছিলো মান্না ফাউন্ডেশন। আমার স্বামীর এভাবে আকস্মিক চলে যাওয়া ও তার পরবর্তীতে আমার কাছের অনেক স্বজনের চিরতরে দূরে চলে যায়। সেই জায়গা থেকে সংগ্রাম করে যাই। আমি জানি, আমার মতো অনেক সংগ্রামী নারী একাকী জীবন যুদ্ধে কেউ জয়ী হয়েছেন কিংবা পরাজিত। আর তাই মান্না ফাউন্ডেশনের আর্তমানবতার সেবায় একটি বিষয় থাকবে, তাহ লো স্বজনহারা ও স্বজনবিহীন সংগ্রামী নারীদের নিয়ে কাজ করা ও এক অপরের পাশে থাকা।
শেলী মান্নার ওই স্ট্যাটাস থেকে ধারণা করা যায়, চিত্রনায়ক মান্নার মৃত্যুর পর তার সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষীরার দূরে সরে যেতে থাকেন। নায়কের স্ত্রী একাই হাল ধরেন স্বামীর রেখে যাওয়া চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মকাণ্ডে। কিন্তু সেখানে এক বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের ফাঁদের বেড়াজালে পরে যান। আত্মসম্মান বাঁচাতে বৈষয়িক অনেক বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তও হন। অনেক আত্মীয়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করলেও শেলী মান্নাকে শূন্যতা, বিষণ্ণতা ও চরম পরিস্থিতি থেকে একবোরে টেনে তোলার মতো কোনো স্বজন এগিয়ে আসেনি।
চিত্রনায়ক মান্না ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের হাল ধরেন তার স্ত্রী শেলী মান্না।