মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও বাংলাদেশে গড়ে ওঠেছে বড় বাজার। প্রতিবেশী দুটি দেশ থেকে ঢুকছে মাদক। প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা। তাই মাদকের বিস্তার রোধে দেশে প্রথমবারের মতো সরকার এ দুই জেলাকে ‘মাদকপ্রবণ এলাকা’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার। সাগর আর পাহাড় যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এখানে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতও এ জেলায়। এতকিছুর পরও জেলাটির রয়েছে বদনাম। ইয়াবা ও আইসের প্রবেশদ্বার বলা হয় জেলাটিকে।
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে প্রায় তিন কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদ। ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। এ নদ পেরিয়ে আগে শুধু ইয়াবা ঢুকলেও এখন পাল্লা দিয়ে আসছে আইসের চালান। পরে সেটি চট্টগ্রামে খালাস হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।
যেসব কারণ বিবেচনায় নিয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করা যেতে পারে তার কিছু মানদণ্ড ও সূচক তৈরি করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
এর মধ্যে রয়েছে, ওই এলাকায় মাদকাসক্ত ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা, মামলা, মাদক বিক্রির স্পট, মাদকের প্রাপ্যতা, মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রবণতা, রুটসহ প্রতিবেশী দেশ থেকে মাদক চোরাচালানের প্রবণতা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়) জাফরুল্ল্যাহ কাজল সম্প্রতি সময় সংবাদকে বলেন, যত আসামি ধরা হয় তারা একই কথা বলেন, হয় টেকনাফ বা কক্সবাজার; না হয় চট্টগ্রাম থেকে তারা মাদক আনছেন। যখনই মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষিত হবে, সরকার ঘোষণা করবে। তখন কিন্তু ওই এলাকার ওপর ফোকাসটা বেশি হবে। তখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ফোকাসিং হয়ে যাবে, পুলিশের ফোকাসে আসবে। ওখানে বিজিবি ও র্যাবসহ যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে তাদের সবার কাছে ফোকাসে থাকবে। এটি করার কারণে সরকার মনে করছে সবার নজরদারি বাড়বে। মিয়ানমার থেকে মাদক আসা বন্ধ হবে।
বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন জানান, বাস্তবায়নে নিতে হবে সমন্বিত পরিকল্পনা।
তিনি আরও বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে কোন কোন বাহিনী জড়িত, তাদের মধ্যে যদি কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত হয় বা এটার সাথে জড়িত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা এর আগে দেখেছি, কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি তারা নানাভাবে এ কাজে জড়িত। এ বিষয়গুলোতে বেশি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ মাদক সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপদ তৈরি করেছে। পেশাজীবী থেকে শুরু করে বয়স্ক এবং শিশুরাও আজ মাদকে আসক্ত। মাদক সমাজে বিপদ তৈরি করছে, তার সাথে সাথে যারা মাদক নিচ্ছে তারা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বলেও জানান তিনি।
সে সব পরিবারে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এ সমাজেই মাদকের জন্য বাবা-মাকে খুন করা হচ্ছে। মাদকের কারণে সমাজে যেমন অপরাধ বাড়ছে, ঠিক তেমনি পরিবারের মধ্যে অশান্তি তৈরি হচ্ছে বলে জানান এ বিশ্লেষক।
আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের রুট ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’ এবং ‘গোল্ডেন ক্রিসেন্ট’ এর একেবারে কেন্দ্রে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে দেশে অনুপ্রবেশ ঘটছে মাদকের।