সফিকুজ্জামানের (৪৪) কথা ছিলো কর্মস্থলে পৌঁছে ফোন করবেন স্ত্রীকে। স্বামীর ফোনের অপেক্ষা থাকা স্ত্রী ঠিকই ফোন পেয়েছেন। তবে তা স্বামীর নম্বর থেকে নয়। অপরিচিত এক নম্বরের ফোনে হাসপাতাল থেকে আসে স্বামীর মৃত্যুর খবর।
রোববার (৫ মার্চ) সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিস্ফোরণে লন্ডভন্ড হয়ে যায় পপি আক্তারের জীবন। আকস্মিক এ ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা তিনি।
জীবন কতোটা ঠুনকো, অনিরাপদ আর অনিশ্চিতায় ভরা হতে পারে তা হয়তো এই মুহূর্তে পপি আক্তার ছাড়া আর কারো সেভাবে বোঝার কথা নয়। সম্পূর্ণ সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থায় কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বিদায় নেয়া স্বামী আব্দুল মান্নান লাশ হয়ে হাসপাতাল মর্গে।
কদিন আগেই হারিয়েছেন তিন সন্তানের মধ্যে ১১ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে মিনাকে। শোকের সেই রেশ না কাটতেই স্বামী হারিয়ে পাগলপ্রায় শাহিদা। বাবা হারা দুই ছেলে সন্তানও ভেঙে পড়েছে শোকের সাগরে।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরেক নিহত আব্দুল মান্নান (৬৩) স্ত্রী শাহিদা বেগম ১৩ বছর বয়সী ছেলে ও ৩ বছরের ছোট্ট এক মেয়ে নিয়ে পড়েছেন অথৈ সাগরে। ৩ বছরের অবুঝ শিশুটি বুঝতেও পারছেন না জীবনের শুরুতেই হারিয়ে ফেলেছের বাবা নামের বটবৃক্ষ। অবুঝ এ শিশু হাসপাতালে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে ‘আমার বাবা মারা গেছে, আমার বাবা মারা গেছে’।
রাজধানীর সাইন্সল্যাব এলাকায় ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর অবস্থায় শফিকুজ্জামান, আব্দুল মান্নান ও তুষারকে পার্শ্ববর্তী পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে মৃত ঘোষাণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। আর হাসপাতালটিতে শরীরের প্রায় ২০ ভাগ অংশ পোড়া নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি আছেন স্বপ্না রানী সাহা নামে এক নারী।
পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এম এস এম শারফুজ্জামান রুবেল জানান, দুর্ঘটনায় প্রায় ৫০ জন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। যার মধ্যে তিন মারা যান। তিনজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তারা কেউই আশঙ্কামুক্ত নন বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, সকাল থেকে বিস্ফোরণে আক্রান্ত সাতজন এ হাসপাতালে এসেছেন। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত নুরুন্নবী নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের সবারই শরীরের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ অংশ পোড়া রয়েছে।
দুর্ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় ১৪ জনকে। শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া গুরুতর একজন ভর্তি আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর আশপাশের সড়কে থাকা অনেকেই আহত হন মাথায় ভবনের দেয়ালের ইটের আঘাতে।