লাহোরে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছে পুলিশ। বাসভবনে থেকেই পুলিশকে এড়িয়েছেন ইমরান খান। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেশটির কর্তৃপক্ষ টেলিভিশনে ইমরান খানের কোনো ধরনের ভাষণ সম্প্রচার বা পুনঃসম্প্রচার নিষিদ্ধ করেছে। খবর দ্য ডনের।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে দায়ের করা তোষাখানা মামলায় তিনবার শুনানি এড়িয়ে গেছেন। সর্বশেষ তার আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তিনি হাজির হননি। তার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, ব্যস্ত সূচির কারণে ইমরান খান আদালতে হাজির হতে পারেননি। ফলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইমরান খানের বিরুদ্ধে তোষাখানা মামলায় ইসলামাবাদের একটি আদালত জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
ইসলামাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, তারা রোববার দুপুরের একটু পর পাঞ্জাব পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ইমরান খানের জামান পার্কের বাড়িতে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান, ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা-কর্মীরা বাড়ি ঘিরে রেখেছে। পরে ইসলামাবাদ পুলিশের সুপার ইমরান খানের বাড়ির ভেতরে গিয়ে ইমরান খানকে খোঁজ করলেও তিনি সেখানে ছিলেন না।
ইসলামাবাদ পুলিশ এক টুইটে জানিয়েছে, ‘ইসলামাবাদ পুলিশ তাদের হেফাজতে ইমরান খানকে (লাহোর থেকে গ্রেফতার করে) ইসলামাবাদে স্থানান্তর করবে। আইন সবার জন্য সমান।’ টুইটে আরও বলা হয়েছে, ‘আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পৃথকভাবে দ্য ডনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসলামাবাদ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আকবর নাসির বলেন, পুলিশ ইমরানকে দেয়ার জন্য আদালতের নোটিশটি হস্তান্তর করেছে।
আকবর নাসির আরও বলেন, ‘আমরা তাকে (ইমরান খান) আমাদের সঙ্গে আসার জন্য অনুরোধ করছি। যথাযথ সম্মানের সঙ্গেই আমরা ইমরান খানকে আমাদের সাথে আসার জন্য অনুরোধ করেছি, যাতে আদালতের আদেশ মানা সম্ভব হয় এবং তাকে আদালতে হাজির করা যায়।’
ইসলামাবাদ পুলিশের মহাপরিদর্শক আরও বলেন, ‘ইসলামাবাদ ও লাহোরের পুলিশ এখনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির বাইরে উপস্থিত রয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার না করে সেখান থেকে নড়ছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের কাজ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অক্ষুণ্ণ রাখা। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব, যাতে তিনি (ইমরান খান) আমাদের সঙ্গে আসেন।’
এদিকে, গ্রেফতার এড়িয়ে রোববার বিকেলে ৫টার একটু আগে ইমরান খান জাতির উদ্দেশে এক ভাষণ দেন। তার ভাষণের পরপরই পাকিস্তানের ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি এক নির্বাহী আদেশে ইমরান খানের সব ভাষণের সম্প্রচার ও পুনঃসম্প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
নিষেধাজ্ঞার আদেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি বিধিসমূহ উল্লেখ করে বলেছে, দেশের সব লাইসেন্সধারী টিভি চ্যানেলগুলোকে ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যেকোনো বিষয়বস্তু সম্প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে’ নির্দেশ দেয়া হল।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি ওই আদেশে আরও উল্লেখ করেছে, ইমরান খান তার বক্তৃতা এবং বিবৃতিতে, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রতিকূল এবং জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে।’