মু.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ , প্রতিনিধি।।
লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর পাড়ে অবস্থিত মজুচৌধুরীর হাট নৌ-ঘাট।প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ৭ বছরেও অসমাপ্ত মজু চৌধুরী নৌ-বন্দর,২১ জেলার ভোগান্তি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে সড়কপথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ ঢাকা ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে যাতায়াত করে। তাই এ জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে যোগাযোগ স্থাপনে দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্মীপুরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত ১২ জানুয়ারি ২০১৭ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের টি এ শাখা রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিআইডব্লিউটিএ-কে মজুচৌধুরী হাটকে নৌবন্দরের সংরক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় মজুচৌধুরীর হাটকে নৌবন্দর ঘোষণা ও নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দীর্ঘ সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই নৌবন্দরের। নেই জমি অধিগ্রহণ বা ভৌত অবকাঠামো নির্মাণসহ উল্লেখযোগ্য অন্য কোনো কার্যক্রম। এতে হতাশার পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মজুচৌধুরী হাট এলাকায় নৌবন্দর স্থাপিত হলে বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের ২১ জেলার মানুষের মাঝে যোগাযোগের নতুন সেতুবন্ধ তৈরি হবে। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের। সর্বোপরি এ এলাকায় অর্থনৈতিক একটা প্রবাহ তৈরি হবে। কর্মসংস্থান হবে অনেকের। এক জেলার সঙ্গে অন্য জেলার মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটবে। এ কারণে নৌবন্দরটির নির্মাণকাজ দ্রুত শুরুর দাবি জানান স্থানীয়রা।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন জানান, মেঘনা নদীতে নাব্য সংকটের কারণে নৌবন্দরের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তবে সরকার এরই মধ্যে ড্রেজিংয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। ড্রেজিংয়ের কাজ প্রায় শেষের পথে। ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হলে লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস চালু হবে। এরই মধ্যে মজুচৌধুরীর হাট নৌবন্দরটি গেজেট নোটিফিকেশনের কাজ শেষ হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে নৌঘাটটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ-র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কোস্টগার্ড, নৌপুলিশের জন্য কিছু স্থাপনার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, কিছু চলমান আছে। এ ছাড়া অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে নৌবন্দরের কাজ এগিয়ে যাওয়ার কথা জানান স্থানীয় এ সংসদ সদস্য।
তিনি আরও বলেন, ‘এ জেলাবাসী দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে নৌবন্দরের দাবি করে আসছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোনো সরকার এ জেলাবাসীর সে দাবি পূরণ করেনি। অচিরেই এ জেলাবাসী মজুচৌধুরীর হাট নৌবন্দরের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাবে।’
অথচ লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ নৌবন্দর বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন এবং কোনো বক্তব্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় পরিদর্শনে এসে চাঁদপুর নদীবন্দর ও বিআইডব্লিউটিএ-র উপপরিচালক ও বন্দর কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, ২০১৭ সালে নৌবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও মূলত গত বছর থেকে নৌবন্দরের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটে ১টি লঞ্চঘাট, ২টি ফেরিঘাটের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মজুচৌধুরী হাট থেকে ভোলার ইলিশা পর্যন্ত নৌপথ সচল রাখার জন্য সার্বক্ষণিক ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া নৌপথকে নিরাপদ ও সুষ্ঠু নৌযান চলাচলের স্বার্থে সার্বক্ষণিক বয়া, বাতি এবং বিকনসহ নেভিগেশনাল সব ধরনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
প্রস্তাবিত ঘাট হিসেবে কার্গো ঘাট এবং স্পিড বোট ঘাট নির্মাণের লক্ষ্যে শনিবার চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ-র বন্দর কর্মকর্তা এবং যুগ্ম পরিচালক (নৌসওজ) মজুচৌধুরীর হাট পরিদর্শন করে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
লক্ষ্মীপুর জেলাসহ দেশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকার দ্রুত পূর্ণাঙ্গভাবে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাট নৌবন্দর বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন–এমনটাই প্রত্যাশা জেলাবাসীর।