মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের দুই বছর পেরিয়ে গেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ক্ষমতা দখলের পর থেকে বিরোধীদের দমনে কোনো ছাড় দেয়নি তারা। দেশটির মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) দাবি করেছে, ক্ষমতা গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত জান্তাবাহিনী ৩ হাজার বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। এ সময়ে বিনা বিচারে বন্দী হয়েছেন সাড়ে ১৫ হাজার।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নাগাদ নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে বিনা বিচারে বন্দী হয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ জন। এ প্রতিবেদনে যারা জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
জান্তাবাহিনীর হাতে নিহত ৩ হাজারতম ব্যক্তিটি একজন সন্যাসী। ৭০ বছর বয়সী ওই সন্যাসীর নাম সাতে। শুক্রবার মিয়ানমারের সাগাইন প্রদেশের খিন-উ টাউনশিপের লেত প্যান হ্লা গ্রামে অভিযান চালানোর সময় ওই বৃদ্ধ সন্যাসীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বয়সের ভারে ন্যূব্জ সন্যাসী পালাতে সক্ষম না হওয়ায় আগুনে পুড়ে মারা যান।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভ্যুত্থানের পর থেকে শাসক গোষ্ঠী বিরোধীদের দমনে দেশব্যাপী ব্যাপক ক্র্যাকডাউন চালিয়েছে। এর মধ্যে সাগাইন অঞ্চলেই সবচেয়ে শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ে তারা। এখানে হাতাহতের সংখ্যাও বেশি। এএপিপির প্রতিবেদন অনুসারে, অভ্যুত্থানের পর থেকে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাগাইনে ১ হাজার ২২৯ জন নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ৪১ শতাংশ।
এ দুই বছরে বিরোধী মত দমনে সাগাইনের পর সবচেয়ে নিপীড়িত দুই অঞ্চল হলো মান্দালয় এবং ইয়াঙ্গুন। মান্দালয়ে জান্তাবাহিনীর হাতে দুই বছরে নিহত হয়েছে ৩৫০ জন এবং ইয়াঙ্গুনে ৩১৬ জন।
নিহতদের অধিকাংশই শান্তিকামী প্রতিবাদকারী ছিলেন। যাদের অধিকাংশকেই মিছিলের সময় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জান্তা শাসনবিরোধী অধিকারকর্মী, বিরোধী আইনপ্রণেতাদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানোর ফলে নিহত হয়েছেন অনেকে। এর বাইরেও জান্তাবাহিনীর অভিযানে প্রায় ৩০০ শিশুও নিহত হয়েছে।