ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (ডিএই) কাওলা-তেজগাঁও অংশের ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি ৫৭ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার।
তিনি বলেন, ‘সরকার রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। রাজধানীর আশেপাশে যানবাহন চলাচল সহজ করার লক্ষ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-র আওতায় ৩১ র্যাম্প বিশিষ্ট বহুল প্রত্যাশিত চার লেনের ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।’
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর বাংলাদেশ সরকার দেবে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার যার মধ্যে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার মূল এলিভেটেড অংশ। এটির র্যাম্প রয়েছে ৩১টি।
আকতার বলেন, ‘বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে বনানী পর্যন্ত ফ্লাইওভারের প্রথম অংশের কাজ এখন প্রায় প্রস্তুত। এই অংশের প্রায় ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং সম্পন্ন হয়েছে। বনানী থেকে মগবাজার রেলক্রসসিং পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত তৃতীয় ধাপের ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।’
এদিকে বনানী-মহাখালী ডিওএইচএস এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাখালপাড়া-তেজগাঁও অংশের কাজও শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান।
এরই মধ্যে রাস্তার বাতি বসানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে রেলিং বসানোর কাজও চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে কাওলা থেকে বনানী অংশ পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প থেকে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলতে যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য পৃথক টোল প্লাজা স্থাপন করবে।
এ প্রকল্প নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় পর্যালোচনা চুক্তি। প্রকল্প সমাপ্তির সময়কাল ধরা হয় ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্প পরিচালক জানান, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে বেশ কিছু অবকাঠামোগত প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আয়তন, বাজেট এবং অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে এসব প্রকল্পের অনেকগুলোকে মেগা প্রকল্প হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সরকার এসবের কয়েকটিকে ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে চিহিৃত করেছে। এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও চার লেন বিশিষ্ট চন্দ্র-এলেঙ্গা মহাসড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান রয়েছে।
এছাড়া দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সরকার অবকাঠামোগত নতুন প্রকল্প ও চলমান প্রকল্পের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ও দীর্ঘতম আন্ডারওয়াটার রোড টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ কাজ দ্রুতই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নয়ন প্রকল্প প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে এবং এতে দেশের জিডিপি বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি ১,২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেলওয়ে সেতু দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাই সরকারের এখন মূল ফোকাস হচ্ছে এসবের কাজ সময়মতো সম্পন্ন করা।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এইসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় বলে জানান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দায়িত্বে থাকা এ কর্মকর্তা।