সম্প্রতি দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ৯টি বসতিকে বৈধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইল৷ সাম্প্রতিক সময়ে জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের কয়েকটি হামলা চালানোর পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ বলছে, তারা ইসরাইলের এই সিদ্ধান্তে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’৷ খবর রয়টার্সের।
জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যু্ক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, নতুন করে ১০ হাজার বাড়ি নির্মাণ এবং অতীতে ইসরাইলের আইনে অবৈধ বলে বিবেচিত ৯টি বসতিকে বৈধ করার ইসরাইল সরকারের ঘোষণায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা এই একতরফা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি, যেটা শুধুই ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াবে এবং আলোচনার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টাকে ব্যাহত করবে৷ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে ‘মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক, ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির’ জন্য তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে৷
ওই বিবৃতি প্রকাশের পর মঙ্গলবার ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইটামার বেন-গেভির এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ৯টি বসতি ভালো, কিন্তু যথেষ্ট নয়৷ আমরা আরও চাই। চরম ডানপন্থি এই রাজনীতিবিদ আরও বলেন, ইসরাইলের জমি ইসরাইলের মানুষের৷
এদিকে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন পিএলওর নির্বাহী কমিটির মহাসচিব হুসেইন আল-শেখ পশ্চিমা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে টুইট করেছেন। তবে তিনি বলেন, আমাদের দাবি, তাদের (পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের) কথাগুলো কাজে পরিণত হয়ে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হোক যেটা ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে তার আগ্রাসন ও পদক্ষেপ বন্ধ করতে বাধ্য করবে৷
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে একটি চরম ডানপন্থি জোট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ সাম্প্রতিক সময়ে জেরুসালেমে কয়েকজন ফিলিস্তিনির হামলা চালানোর পর রোববার ১০ হাজার নতুন বাড়ি নির্মাণ ও ৯টি বসতি বৈধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ইসরাইল সরকার৷
গত ১০ ফেব্রুয়ারি পূর্ব জেরুজালেমের এক বাসস্টপে এক ফিলিস্তিনি তার গাড়ি তুলে দিলে ৩ জন মারা যান৷ গতমাসে এক সিনাগগের বাইরে গুলিতে ৭ জন প্রাণ হারান৷ ওই হামলার পর নেতানিয়াহু ‘শক্ত উত্তর’ দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন৷
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত পশ্চিম তীরে ইসরাইলের বসতিকে আন্তর্জাতিক আইনের চোখে অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করে৷ জার্মান সরকার ও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য ইসরাইলের বসতি স্থাপন নীতির সমালোচনা করে৷
ইসরাইলের বসতি স্থাপনের পদক্ষেপের ‘কোনো আইনগত বৈধতা নেই’ এবং এটা ‘আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন’ – ২০১৬ সালে এমন এক প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্যের মধ্যে ৪টি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল৷
গতমাসে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, ‘বসতি সম্প্রসারণ’ ও ‘ফাঁড়ির বৈধকরণ’- এমন ২ পদক্ষেপ দ্বি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনকে কঠিন করে তোলে৷