বিচার ব্যবস্থা সংস্কারকে কেন্দ্র করে গভীর সংকটে ইসরাইল। পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে রাজপথ। প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের আগুন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন দশ হাজারের বেশি মানুষ। পার্লামেন্টে আলোচনায় ক্ষমতাসীন দলের ওপর চড়াও হচ্ছেন বিরোধী সদস্যরা।
প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বিচার ব্যবস্থা সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে সোমবার আলোচনায় বসে ইসরাইলের সংসদীয় কমিটি। এতে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। আলোচনার এক পর্যায়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের দিকে তেড়ে আসেন বিরোধী দলীয় সদস্যরা; টেবিলের ওপর ওঠে তারা প্রতিবাদ জানান বিচার ব্যবস্থা সংশোধনের।
সোমবার জেরুজালেমসহ বিভিন্ন শহরের রাজপথে নামেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতি শনিবার নেতানিয়াহু বিরোধী বিক্ষোভ হলেও হঠাৎ করেই রোববার থেকে সরকারবিরোধী স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ইসরাইলের রাজপথ।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা না পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিচার দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, নিজেদের দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই পেতেই বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন নেতানিয়াহু। এমন উদ্যোগের মাধ্যমে ইসরাইলের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও অভিযোগ তাদের।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘এখানে কোনো গণতন্ত্র নেই; শিক্ষাও নেই। তারা যা ইচ্ছা তাই করছেন। এভাবে একটা সরকার চলতে পারে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার রক্ষায় আমাদের এ আন্দোলন। আমরা এখান থেকে জেরুজালেমে যেতে চাই। ইসরাইলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কোনোভাবেই পরিবর্তন হতে দেয়া হবে না। আমাদের এ আন্দোলন গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন। আমাদের শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে চাই। এখানে সবাই মিলেমিশে বসবাস করবে। উন্নত প্রযুক্তির বিশ্বে কোনো জাতি অন্ধকারে যেতে পারে না।’
এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুকে আরো ভেবে-চিন্তে সামনে এগুনোর পরামর্শ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে আপসের মাধ্যম যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ইসরাইলের সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তার।
গত ২৯ ডিসেম্বর ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন কট্টরপন্থি নেতা বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ক্ষমতা গ্রহণের পরই বিচার ব্যবস্থার সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা উন্মোচন করেন তিনি। নতুন ওই সংশোধনীতে, সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাতিলের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে ইসরাইলের পার্লামেন্টকে। নেতানিয়াহুর এ উদ্যোগের শুরু থেকে বিরোধিতা করে আসছে সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, এ সংশোধনী বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল করবে।