ঢাকার ধামরাইয়ে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও উপকারের আসছে না এলাকাবাসীর। বছরের পর বছর ধরে বাঁশের মই ব্যবহার করে সেতু পারাপার হতে গিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীসহ বয়স্করা প্রায়ই আহত হচ্ছেন।
জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ঠিকাদারের খামখেয়ালির কারণেই সেতুটির কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, নকশার ত্রুটির কারণে সেতুর অ্যাপ্রোচওয়ালসহ সংযোগ সড়ক নির্মাণে নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের পর কাজ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুতিপাড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামবাসীর দুঃখের নাম হচ্ছে গাজীখালী নদীর ওপর নির্মিত নওগাঁও সেতু। কয়েক বছর ধরে মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর থেকেই এটি পরিচিতি পেয়েছে চরম দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার সেতু হিসেবে। সংযোগ সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি। বাধ্য হয়েই মানুষ নদী পারাপারের জন্য বাঁশের মই ব্যবহার করছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থী ও বয়স্করা মই বেয়ে উঠতে গিয়ে প্রায়ই আহত হচ্ছেন। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। উপায় না পেয়ে নদীর পানি কমে আসায় সেতুর নিচ দিয়ে বিকল্প সাঁকোও তৈরি করে দিয়েছে অভিভাবকরা।
বিলকেষ্টি গ্রামের ইউনুছ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাস্তার জন্য আমাদের গ্রামের মানুষ অনেক কষ্ট করছে। আগে বর্ষাকাল আসলে গাজীখালী নদীতে নৌকা পার হতো গ্রামবাসী। নদীর পানি কমলে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতো। তিন বছর আগে নদীতে ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা বিপদে পড়ছি। এখন উঁচু ব্রিজের দুই মুখে বাঁশের মই দিয়ে পার হইতে হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাস্তা থেকে ২০-৩০ ফুট উঁচুতে ব্রিজ তৈরি করছে। এটা কোন বুদ্ধি থেকে হয়েছে, আমরা বুঝতে পারি না।
নওগাঁও গ্রামের গার্মেন্টস শ্রমিক রাশেদা আক্তার বলেন, ‘যাতায়াতের জন্য ব্রিজ তৈরি করতেছে, আর কতদিন লাগবে ব্রিজের কাজ শেষ হতে। ব্রিজের দুই মুখে মই দিয়ে কষ্ট করে উঠতে এবং নামতে হয়। ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় মইয়ে উঠতে গিয়ে পড়ে আঘাত পায়। এটা আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন ব্রিজ আমাদের লাগব না। আগে নৌকা দিয়ে পার হওয়া যেত, সেটাই ভালো ছিল।
নওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রসূল বলেন, সেতুটির কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা কমে আসছে। তাই দ্রুত সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।
সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রমিজুর রহমান রোমা বলেন, ‘ব্রিজটার জন্য এলাকার মানুষের অনেক কষ্ট। ব্রিজটা এত উঁচু করে না তৈরি করলেও পারত। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণেই এমনটা হয়েছে। এ নদীতে এত বড় ট্রলার চলে না যে ব্রিজ এত উঁচু লাগবে। তবে আমি উপজেলার আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টা আলোচনা করেছি। ইতোমধ্যে ব্রিজের সংযোগ সড়কের কাজও শুরু হয়েছে। আশা করি, দ্রুত কাজ শেষ হবে।’
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক জানান, ব্রিজটি কাজ শুরু হওয়ার পরে আমাদের হাইট (উঁচু) বাড়াতে হয়। সে কারণে আমাদের কিছু ডিজাইনের পরিবর্তনের কারণে ব্রিজটা একটু সময় লেগেছে। হাইট বাড়ার কারণে আমাদের দুপাশের অ্যাপ্রোচের ডিজাইনেও কিছু পরিবর্তন আসে। নতুন ডিজাইন আসার পরে কিছু সমস্যাও ছিল। বর্তমানে ব্রিজের কাজ সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে। স্কুলপ্রান্তের একপাশের অ্যাপ্রোচের কাজ চলমান আছে। অপর মাসের কাজটিও টেন্ডার হয়ে এখন কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছে। দুই মাসের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারব। আমরা চেষ্টা করব, যত দ্রুত এলাকার মানুষের কষ্ট দূর করা যায়।’
সেতুটির নকশায় ত্রুটি ও ঠিকাদারের গাফিলতি আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মেইন জিনিসটা কিন্তু আপনাদের বোঝাতে পারছি না। আমরা যখন কোনো ব্রিজ তৈরি করি, তখন একটা নেভিগেশন অ্যাপ্রোভাল লাগে। যেটা পানি উন্নয়ন বোর্ড দেয়। এখন তাদের যে সিস্টেমটাতে পাঁচটা ক্যাটেগরি করছে নদীপথ ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী। সেই ক্রাইটেরিয়ায় আমাদের কাছে মনে হয়, তারা ওই খালটা ভিজিট না করেই তাদের টোটাল ম্যাপ অনুযায়ী অ্যাপ্রোভালটা দিয়ে দিচ্ছে।’
২০১৯ সালে ৪৫ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এক বছরে ২০২০ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য উপযোগী করার কথা থাকলেও তিন বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি।