তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে ঘটে গেল শক্তিশালী ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের এ প্রভাব পড়তে পারে দেশটির আসন্ন এ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। কারণ, উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতির অভিযোগ ও ভবন নির্মাণে কঠোর আইন প্রণয়নে ব্যর্থতার আঙুল উঠেছে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের দিকে।
গত সোমবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) শক্তিশালী ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশ দুটিতে মৃতের সংখ্যা ২৩ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কেই মারা গেছেন ২০ হাজার ২১৩ জন। আর সিরিয়ায় ৩ হাজার ৫০০ জন।
ভূমিকম্পের দুদিন পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। এ সময় উদ্ধার তৎপরতায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে দেশটির জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি বলেও অভিযোগ তাদের।
বিশ্লেষকদের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, চলতি বছরের মে মাসে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এর মাত্র তিন মাস আগে এই ভূমিকম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তুরস্কের ইতিহাসে ভয়াবহ এই সংকট সামাল দিতে না পারলে এর প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে, যা এরদোয়ানের জন্য বিপদই ডেকে আনবে।
উদ্ধারকাজ নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি ভবন নির্মাণ বিধি মেনে না চলার কারণেই ভূমিকম্পে এত প্রাণহানি হয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। ২০১৮ সালে তুরস্কে ভবন নির্মাণে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হলেও আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
তুরস্কের ইমারত বিধি অনুযায়ী, ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উচ্চমানের কংক্রিট ও ইস্পাতের কাঠামো ব্যবহার করতে হবে। আর এমনভাবে নকশা করতে হবে যেন ভূমিকম্পের সময় কম্পন সহ্য করে টিকে থাকতে পারে। তবে ভবন নির্মাণের সময় নিরাপত্তাসংক্রান্ত নীতিমালা না মেনেই নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে ছাড় দেয়া হয়েছে ওই আইন থেকে। যে কারণে নতুন নির্মাণ করা ভবনগুলোও ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর প্রায় ৭৫ হাজার ভবন ওই ছাড়ের আওতায় আসে। এ কারণে দেশটিতে শক্তিশালী কোনো ভূমিকম্প বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে এরদোয়ানকে বহু আগে থেকে সতর্ক করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
বড় ধরনের এই ভূমিকম্পের পর এ বিষয়টিও নতুন করে আলোচনায় এসেছে, যা প্রভাব ফেলতে পারে দেশটির প্রসিডেন্ট নির্বাচনে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, সংকটের মুহূর্ত সামলে নিয়ে নিজের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করতে পারেন এরদোয়ান।