বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন সালাম-বরকত-রফিকের মতো বীর শহীদেরা। আর সেই ভাষা আন্দোলনের মাসে রক্তের দাবিতেই পথে নামলেন পশ্চিমবঙ্গের এক তরুণ প্রকৌশলী। এ যাত্রায় তার শেষ ঠিকানা ঢাকার শহীদ মিনার।
হাতে পোস্টার, পায়ে শক্ত বুট। পিচঢালা পথ বেয়ে কলকাতা থেকে হেঁটে রওনা হলেন বছরের ত্রিশের যুবক। তার দাবি, ‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান।’ প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া নামে বিরল এক রোগে বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে এই রোগে আক্রান্তের হিসেবে বিশ্বের মোট আক্রান্তের আনুপাতিক হারে এগিয়ে ভারত-বাংলাদেশ।
আর এই রোগে আক্রান্তদের বাঁচাতে পারে এক ব্যাগ রক্ত। রক্ত দান করতে প্রয়োজন হয় আত্ম-সচেতনতা। সেই সচেতনতা তৈরি করতেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা আলমগীর খান পথে নেমেছেন।
কলকতার অদূরে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে তার যাত্রা শুরু হয় বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে। তিলোত্তমা শহরের খুব কাছের ঐতিহাসিক যশোর রোড ধরে পায়ে পায়ে এগিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পৌঁছান বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা বনগাঁয়।
পথে যেতে যেতে কথা বলেন সাধারণ মানুষের সাথে। রক্ত দিলে নিজের কোনো ক্ষতি হয় না বরং বাঁচে আরেকজনের জীবন-এমন কথা বোঝান রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকার উৎসুক মানুষকে। সাধারণ মানুষজনও আলমগীরের কথা শোনেন। কেউ কেই এগিয়ে করেন করমর্দন, তোলেন সেলফিও।
পায়ে হেঁটে এর আগে একবার কলকাতা থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন পেশায় প্রকৌশলী আলমগীর। তাই হাঁটার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। যদিও বাংলাদেশে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নতুন। তাই রয়েছে বাড়তি কৌতুহলও।
গত বছর আলমগীর মালদা থেকে দিল্লি একইভাবে পায়ে হেটে প্রচারণা করেন। একই স্লোগানে মে মাসে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন মালদা থেকে সিটি অফ জয় কলকাতায়। এবার তার গন্তব্য কলকাতা থেকে ঢাকা; উদেশ্যও এক-রক্ত দিন জীবন বাঁচান।
ছোট বেলা থেকেই সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত আলমগীর বলছেন, তার বাড়িতে রয়েছে বৃদ্ধ বাবা-মা ও ভাই। বাবা ছাপোষা একজন ব্যবসায়ী হলেও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মন্ত্র মূলত তার কাছ থেকেই পান আলমাগীর।
মানুষ মানুষের জন্য-ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গানের লাইনই যে জীবনের আসল সত্য সেটাও অনুভূব করেন তরুণ আলমগীর খান। তার স্বপ্ন ঘরে ঘরে একদিন রক্ত দাতা জন্মাবে। পৃথিবীতে একজন মানুষও রক্তের অভাবে মৃত্যুর কোলেঢলে পড়বেন না। দু-চোখ ভরে এই স্বপ্ন বুনে পায়ে পায়ে বাস্তবের সিঁড়ি বেয়ে এগুচ্ছেন আলমগীর।