এখনও উদ্ধারকাজে ব্যস্ত উদ্ধারকর্মীরা–যদি একটিও প্রাণ বাঁচানো যায়! কিন্তু তীব্র শীতে সেই আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। তুরস্ক ও সিরিয়ার স্থানীয় উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশ থেকে আসা উদ্ধার ও ত্রাণকর্মীরা৷ উদ্ধারকাজ শেষ হতে হতে মৃতের সংখ্যা বর্তমানের দ্বিগুণও হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দুই দেশের কর্মকর্তাদের।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দিন যত যাচ্ছে দেশ দুটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। কেবল তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে সিরিয়ায় ছাড়িয়েছে ২ হাজার।
উদ্ধারকর্মীদের সংগঠন হোয়াইট হেলমেট জানিয়েছে, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় দেড় হাজারের বেশি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, আহত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।
এখনও বেশির ভাগ স্থানে ধ্বংসস্তূপ সরানো সম্ভব না হওয়ায় অনেকে মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। যত সময় যাচ্ছে, কাউকে জীবিত উদ্ধার করতে পারার সম্ভাবনাও ফুরিয়ে আসছে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় ভোরে সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প। মাত্র ৪৫ সেকেন্ডের ভূকম্পনেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ২ দেশের কয়েক হাজার বাড়িঘর। হতাহত হন হাজার হাজার মানুষ। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল। এখানেই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে অন্তত ৩ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিতে দেশজুড়ে ১৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তবে এ পরিসংখ্যান কেবল সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশের জন্যই প্রযোজ্য। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের হিসাব দামেস্কের সরকারের কাছে নেই।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে জরুরি সহায়তা চেয়ে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে সিরিয়া। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জোটের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনার ইয়ানেৎস লেনারকিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকালে বেসরকারি নাগরিকদের সুরক্ষায় সিরিয়া সরকারের কাছ থেকে সহায়তার আবেদন পেয়েছি আমরা।’
তিনি আরও জানান, জোটের সদস্যদেশগুলোকে এই আহ্বানে সাড়া দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে একই সঙ্গে এই সহায়তা যাতে দামেস্ক সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে না যায়, সেটি নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের পর থেকে সিরিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পাঠাতে শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এরই মধ্যে ১১০ জন উদ্ধারকর্মী পাঠিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে ৬০ সদস্যের উদ্ধারকারী দল। এগিয়ে এসেছে চীন ও তাইওয়ান। এদিকে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।