পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। ৭৯ বছর বয়সি এই সাবেক প্রেসিডেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে একটি হাসপাতালে রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) মারা যান। এক নজরে তার সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো।
জেনারেল মোশাররফ ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় তার পরিবার পাকিস্তানে পাড়ি জমায়।
জেনারেল পারভেজ মোশাররফ করাচির সেন্ট প্যাট্রিক হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ফোরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬১ সালে তিনি কাকুলের পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন এবং ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে অংশ নেন। পরে সাবেক এই স্বৈরশাসক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ছাড়াও জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন।
১৯৯৮ সালে পারভেজ মোশাররফকে জেনারেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয় এবং তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। তার মাত্র ১ বছর পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে তিনি ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর এক অভ্যুত্থান ঘটান এবং নিজেকে দেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা দেন।
২০০১ সালের ২০ জুন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। পরে ২০০২ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে নিজেকে দেশটির বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণার প্রয়াস পান জেনারেল মোশাররফ। এরপর থেকে টানা ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রেসিডেন্ট।
আলোচিত ৯/১১ এর ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সে সময় জেনারেল মোশাররফ পাকিস্তানকে বুশঘোষিত ‘ওয়ার অন টেররের’ অন্যতম প্রধান মিত্র হিসেবে ঘোষণা করেন।
২০০৪ সালে জেনারেল মোশাররফ দেশটির সংবিধানের ১৭তম সংশোধনী এনে নিজেকে সেনাপ্রধান রাখা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করেন। সেবছরই এক নির্বাচনে তিনি আবারও দেশটির প্রেসিডেন্ট হন।
২০০৭ সালে জেনারেল মোশাররফ দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বাধ্যতামূলক পদত্যাগের বিষয়ে একটি অসাংবিধানিক উদ্যোগ নেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশে ‘বিচারবিভাগ পুনর্বহাল’ আন্দোলন নামে বিচারকদের একটি আন্দোলন শুরু হয়। এর এক বছর পর ২০০৮ সালে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে জেনারেল মোশাররফ ১৮ আগস্ট ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।