জানুয়ারি মাস শেষ হলেও শতভাগ বই পায়নি যশোর জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। এ কারণে স্কুলে বিঘ্নিত হচ্ছে পাঠদান। ফলে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। শিক্ষকদের দাবি, তারা পুরাতন বই দিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কিছুটা হলেও শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়ছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি, প্রতিদিনই স্কুলগুলোতে বই সরবরাহ করা হচ্ছে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।
সরকার এক দশক ধরে বছরের প্রথম দিনে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দিচ্ছে। এ জন্য নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক জেলায় পৌঁছে দেয়া হয় বই এবং তা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। তবে এ বছর পহেলা জানুয়ারি বই উৎসবে মাত্র ৪০ শতাংশ বই পৌঁছায় শিক্ষার্থীদের হাতে। জানুয়ারি মাস শেষ হলেও এখনও সম্পূর্ণ বই পায়নি শিক্ষার্থীরা।
জেলা প্রাথমিক অফিসের দাবি, ২৯ জানুয়ারি শতভাগ বই তারা পেয়েছেন এবং তা বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা ৩টি করে বই পেয়েছে। এদিকে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বই এসেছে ৭৫ শতাংশ। বিশেষ করে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই এসেছে সব থেকে কম। এতে করে পাঠদানে ব্যাঘাত হচ্ছে বলে দাবি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের।
যশোর জিলা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ জানায়, সে ৬টা বইয়ের মধ্যে দুটি পেয়েছে। এ দুটির ওপর ক্লাস হয়। অন্য ক্লাসগুলো শিক্ষকরা পুরাতন বই দিয়ে নেন। কিন্তু বাসায় পড়ার কোনো সুযোগ নেই।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আনোয়ার হোসেন জানায়, তাদের ক্লাসে মোট ১৩টি বই। এর মধ্যে সে ছয়টি পেয়েছে। মূল বইগুলো পাওয়ায় ক্লাস করতে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। যে ৭টা বই পাইনি তার জন্য পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে সেগুলোরও ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। নতুন সিলেবাস হওয়ায় শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তারা সেই প্রশিক্ষণের আলোকে ক্লাস করিয়ে থাকেন।
যশোর সদর উপজেলার ভাতুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন জানায়, সে ষষ্ঠ শ্রেণির ১৩টা বইয়ের মধ্যে মাত্র ৩টি বই পেয়েছে।
যশোর শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র শাহ আলম বলেন, ‘১৪টা বইয়ের ভেতরে ৯টি বই পেয়েছি। বাকি পাঁচটা ক্লাস পুরাতন বই দিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। স্কুলে পাঠদান হলেও বাড়ি গিয়ে পড়া সম্পূর্ণ করতে পারছি না। অনেকে পুরাতন বই সংগ্রহ করলেও আমি সংগ্রহ করতে পারিনি।’
জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার দুটি সন্তান। একটি তৃতীয় শ্রেণি এবং অপরটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। একজন তিনটি আরেকজন ছয়টা বই পেয়েছে। জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে গেলেও তারা পড়াশোনা করাতে পারছে না। বাচ্চারা স্কুলে গেলেও বাড়িতে পড়াশোনা করতে চাইছে না। তারা বলছে, বই নেই পড়ব কীভাবে। এতে করে তারা পিছিয়ে পড়ছে।
হাফিজুর রহমান নামে অপর এক অভিভাবক বলেন, মার্চে স্কুল পরীক্ষা হবে। অথচ জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে এখনো বই পেল না শিক্ষার্থীরা। তারা তো প্রস্তুতিরও সময় পাবে না। শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত বই বিতরণের আহ্বান জানান তিনি।
অবশ্য শিক্ষকদের দাবি, নিয়মিত ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সব বই হাতে না পেলেও তারা পুরাতন বই দিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।
যশোর শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জানুয়ারি মাস শেষ হলেও আমরা এখনো সম্পূর্ণ বই পাইনি। তারপরও আমরা সব ক্লাসগুলো নিচ্ছি। তবে নতুন কারিকুলামের কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্লাসগুলো নিতে একটু বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সব বই পেলে পুরোদমে ক্লাস শুরু হবে।
এদিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম গোলাম আযমের দাবি, প্রতিদিনই বই আসছে এবং স্কুলগুলোতে বই সরবরাহ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে গেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষা বিভাগের তথ্য মতে, যশোর জেলায় ২ হাজার ২২২টি প্রাথমিক, ৬৫২টি মাধ্যমিক ও ৩৬৫টি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪১ লাখ ২৩ হাজার ২৫৬টি।