ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আলোচনায় রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। মস্কো এই ভাড়াটে সেনাদের কিয়েভে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে রাশিয়ার এই ওয়াগনার গ্রুপ আসলে কতটা ভয়ংকর? সম্প্রতি তাদের নিয়ে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
কিয়েভের দাবি, রাশিয়ার হয়ে ভাড়াটে সেনারা ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে। সম্প্রতি দনবাসের সোলেদার শহর দখলের দাবি করে ওয়াগনার গ্রুপ।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, ওয়াগনার গ্রুপ নিয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ইউক্রেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ওয়াগনার সেনারা খুবই ভয়ংকর। এমনকি অনেক সেনা হতাহত হলেও তারা অবিচল থাকে। ওয়াগনার সম্পর্কে আরও বলা হয়, তাদের হামলাকারী দল কমান্ডারের নির্দেশ ছাড়া কখনো পিছপা হয় না। অনুমতি ছাড়া বা আহত হওয়া ছাড়া যুদ্ধের ময়দান ছাড়লে তাৎক্ষণিক গুলি করে হত্যার শাস্তির বিধান রয়েছে তাদের।
ইউক্রেনীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ওয়াগনারের আহত সেনারা যুদ্ধের ময়দানে কয়েক ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকেন। কেননা হামলাকারী দলের সদস্যরা আহতদের নিয়ে যেতে পারে না। তাদের কাজই হলো লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হামলা অব্যাহত রাখা। ওয়াগনার তাদের সেনাদের রকেট-প্রোপেলড গ্রেনেড ও ড্রোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে ছোট ছোট দলে মোতায়েন করে, যা খুবই কার্যকরী কৌশল বলে মনে করা হয়।
ইউক্রেনের বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে রাশিয়ার সেনাবাহিনীও ওয়াগনারের কৌশল আয়ত্ত্বের চেষ্টা করছে।
এদিকে ইউক্রেনজুড়ে নৃশংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার গ্রুপকে সম্প্রতি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, সংগঠনটিকে উত্তর কোরিয়া অস্ত্র সরবরাহ করছে বলেও অভিযোগ তুলেছে হোয়াইট হাউস।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মালিকানাধীন সংগঠন ওয়্যাগনার থেকে অন্তত ৫০ হাজার সেনাকে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশই রাশিয়ার কারাগারগুলো থেকে নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়। ভাড়াটে এসব সেনাই ইউক্রেনজুড়ে নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে বলে জানানো হয়।
শুধু তাই নয়, ওয়্যাগনারকে যারা সহায়তা করছে তাদের চিহ্নিত করে প্রকাশ্যে আনতে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে বাইডেন প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান কিরবি।
হোয়াইট হাউসের দাবি, ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য ওয়াগনারকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে উত্তর কোরিয়া। এ বিষয়ক বেশ কিছু ছবিও সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করেন জন কিরবি।
এদিকে, ওয়াগনারকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী তাদের নেটওয়ার্ক সংকুচিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একইসঙ্গে, আফ্রিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ওয়্যাগনারের ভাড়াটে সেনা সরবরাহের ব্যবসা ব্যাহত হবে বলেও মত তাদের।
তবে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের ‘সহকর্মী’ হিসেবে উল্লেখ করে অপরাধ দমনে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে পুরোপুরি অসত্য ও ভিত্তিহীন দাবি করেছেন ওয়াগনার প্রধান।