মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর ॥
পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তে দক্ষিণ থানা সংলগ্ন সোনালী ব্যাংক মোড়ে এলপি গ্যাস ভর্তি ট্রাককে রোগীবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্স পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা মারে। এসময় অ্যাম্বুলেন্সটি ঔ ট্রাকের নীচে ঢুকে পড়লে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীসহ ৬ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৪টার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার গোরখানা গ্রামের আমেরিকান প্রবাসী লতিফ মল্লিকের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৫৫), তার মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা(৩০), একই জেলার দশমিনা থানার আদমপুর গ্রামের আঃ রাজ্জাক মল্লিকের ছেলে স্বাস্থ্যকর্মী ফজলে রাব্বি(২৮), খুলনার দীঘলিয়া থানার চন্দ্রনিমহল নিবাসী অ্যাম্বুলেন্স চালক রবিউল(২৯), মাদারীপুর জেলার মস্তফাপুরনিবাসী সহকারী চালক জিলানী(২৮) এবং দৈনিক নবচেতনার বরিশাল প্রতিনিধি মাসুদ রানা(৩০)।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা, শিবচর হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোররাত ৪টায় বরিশাল থেকে ঢাকাগামী রোগীবহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছায়। এসময় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাছে গতিনিরোধক পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা মারে। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ঢুকে দুমড়েমুচড়ে যায়। স্বজনরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকতেন লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০)। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে এক বছর আগে বাংলাদেশে আসেন তিনি। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মা জাহানারা বেগমকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু মায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মা জাহানারা বেগম, চাচাতো ভাই ফজলে রাব্বির সঙ্গে লিমাও মারা যান। এই দুর্ঘটনায় তাদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের চালক রবিউল, সহকারী জিলানী ও এক পরিচিতজন মারা গেছেন।
এদিকে জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পারিবারকে দাফন সম্পন্ন করার কাজে সহযোগিতার জন্য তাৎক্ষণিক মানবিক ফান্ড থেকে নগদ ১০হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। নিহত জাহানারা বেগমের মেয়ে শিল্পি আক্তার বলেন, আমার মায়ের ক্লোন ক্যা¯œার ছিলো। গতকাল ব্রেইন স্ট্রোক করায় প্রথমে বরিশালের বেলভিউ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাকে নিয়ে ঢাকায় রওয়ানা দেয় আত্মীয়-স্বজনরা। মাঝপথে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে তারা দূর্ঘটনার শিকার হয়। নিহতের স্বজনরা জানান, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার গোরখানা গ্রামের লতিফ মল্লিক ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকেন। ২০১০ সালে বাবার কাছে যান লুৎফুন্নাহার লিমা।
পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার লিমা ফ্লোরিডায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। তার মা জাহানারা বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। জাহানারা কিডনি ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে লিমা গত বছর বাংলাদেশে মায়ের কাছে ফিরে আসেন। মায়ের চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। জাহানারা বেগম কয়েক দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শহরের বাজার রোড এলাকার কেএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল সোমবার ডাক্তারগণ তাকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হন তারা।
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর সার্কেলের এএসপি মারুফ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পর ট্রাক ফেলে চালক পালিয়ে যান। পুলিশ ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স উদ্ধার করে শিবচর হাইওয়ে থানায় নিয়ে জব্দ করে রেখেছে। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের নিকট লাশ হস্তান্তার করা হয়েছে। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুল হাসান সোহেল বলেন, আমরা নিহতদের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পেরেছি। আমরা তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা ফান্ড থেকে নগদ ১০হাজার টাকা করে মোট ৬০হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করেছি।