টানা দুটি বিশ্বকাপ জেতা অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল ফ্রান্সের হুগো লরিসের সামনে। তবে ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে পূরণ হয়নি সে স্বপ্ন। এরপর সোমবার (৯ জানুয়ারি) জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন টটেনহ্যামে খেলা এই গোলরক্ষক। সেই সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজের আচরণ নিয়েও।
ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিস নিজের সময়ের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবেই বিবেচিত হবেন। জাতীয় দলে ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে অর্জন কম নয়। কখনোই হয়তো জিয়ানলুইজি বুফন, ইকার ক্যাসিয়াস, ম্যানুয়েল ন্যুয়ার কিংবা থিবো কোর্তোয়ার মতো পাদপ্রদীপের আলো নিজের দিকে টানতে পারেননি, তবে নিজের জায়গায় তিনি অনন্য। ব্যক্তিত্বে তিনি বাকিদের চেয়ে ভিন্ন, খেলায় জয় পরাজয়ের চেয়েও তার কাছে বেশি জরুরি নিজের ব্যক্তিত্বে অটল থাকা।
জাতীয় দলের জার্সিতে অর্জনটা অবশ্য কম নয়। ২০১৮ বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে ফ্রান্সকে জিতিয়েছেন তাদের ইতিহাসের দ্বিতীয় শিরোপা। এরপর ২০২১ সালে জিতিয়েছেন উয়েফা নেশন্স লিগ। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন। তবে টাইব্রেকারে হেরে গেছে তার দল।
লুসাইল স্টেডিয়ামে সেই ফাইনালে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ৩-৩ গোলের সমতায় শেষ হয়। এরপর টাইব্রেকারে খেলা গড়ালে আর্জেন্টাইনদের একটি শটও ঠেকাতে পারেননি লরিস। অন্যদিকে কিংসলে ক্যোমানের শট ঠেকিয়ে ও শুয়েমিনির সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক খেলায় দুর্বল করে শট মিস করতে বাধ্য করেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজ।
টাইব্রেকারে মার্টিনেজ ফ্রান্সের শুটারদের ক্রমাগত স্লেজিং করে যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে নেমেছিলেন, সেটা আদতে খেলোয়াড়সুলভ ছিল কি না, তা নিয়ে হয়েছে ঢের আলোচনা। ফ্রান্সের ক্রীড়া দৈনিক লে’কিপের সঙ্গে যে সাক্ষাৎকারে লরিস অবসরের ঘোষণা দেন, সেখানেও অবধারিতভাবে উঠে এসেছে সে প্রশ্নটিও। চাইলে কী লরিসও পারতেন এমির মতো স্লেজিং করতে?
লরিস উত্তর দিয়েছেন নেতিবাচক। নিজের স্বভাবসুলভ ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু জিনিস আমার পক্ষে সম্ভব না। নিজেকে হাস্যকর বানানো, প্রতিপক্ষকে উত্ত্যক্ত করা, সীমা লঙ্ঘন, এগুলো আমার সঙ্গে যায় না। আমি খুবই বিবেচক ও সৎ মানুষ। আমি জানি না ওসব করে কীভাবে জেতা যায়। যদিও এভাবে হারতেও আমার ভালো লাগেনি।’
বিশ্বকাপ জিতে বাঁধভাঙা উদ্যাপন ও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে দারুণভাবে সমালোচিত হয়েছেন মার্টিনেজ। তার বিরুদ্ধে রীতিমতো অভিযোগ জানিয়েছে ফ্রান্স ফুটবল। তবে এ নিয়ে আর কিছু বলতে চান না লরিস। তিনি বলেন, ‘‘আসলে সে সবকিছুতেই খুব তৎপর ছিল। উদ্যাপনের কথা যদি বলেন, সেটার জন্য এরই মধ্যেই সে যথেষ্ট কথা শুনেছে, আর বেশি কিছু বলার দরকার নেই। শুটআউটের সময় সে আমাদের অস্থিতিশীল করে দিতে যত কৌশল পারা যায় কাজে লাগিয়েছে।’
২০০৮ সালে ফ্রান্স জাতীয় দলে অভিষেক হয় লরিসের। এরপর ব্লুজের জার্সি গায়ে সর্বাধিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব টটেনহ্যামের এই গোলরক্ষক। জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছেন ১৪৫ ম্যাচ।