ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনেৎস্কের লবণ খনির শহর খ্যাত সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে কয়েক মাসের লড়াইয়ের পর চলতি সপ্তাহে শহরটির বেশিরভাগ এলাকা দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে রুশ সেনারা। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বলেছে, রুশ বাহিনী ও তাদের সহযোগী ওয়াগনার গ্রুপের বাহিনী গত কয়েকদিনে দোনবাস শিল্প অঞ্চলের বেশিরভাগ শহরের নিয়ন্ত্রণে বেশ অগ্রগতি করেছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোলেদার দখল পুতিন বাহিনীর জন্য বেশ সুবিধাজনক হবে। কারণ তারা দক্ষিণ-পশ্চিমে কয়েক কিলোমিটার দূরে বাখমুত শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। যেখানে প্রায় ১১ মাস আগে রাশিয়া আক্রমণ করার পর থেকে উভয় পক্ষের সৈন্যরা সবচেয়ে তীব্র লড়াই ও ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম নিউ ভয়েস বলছে, রাশিয়ান বাহিনী শহরের প্রধান ইউক্রেনীয় রসদ সরবরাহ রুটের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার তার রাতের ভাষণে দাবি করেন, ব্যাপক ধ্বংসের পরও বাখমুত ও সোলেদার ধরে রেখেছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার (৯ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে বলে, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের কৌশলগত সরবরাহ লাইনে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী। তবে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোলেদার বা বাখমুতের নাম উল্লেখ করেনি।
পূর্ব ইউক্রেনের ছোট একটি শহর বাখমুতের দখল নিতে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে রাখার চেষ্টা করছে রুশ সেনারা। রুশ বাহিনীর নিরন্তর হানায় গোটা শহর কার্যত ধ্বংসস্তূপ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে লাশ। কার্যত মৃতনগরীতে পরিণত হয়েছে পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহর।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও এত দিন প্রাণপণ লড়াই জারি রেখেছিল ইউক্রেনীয় সেনা। তবে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির অনুগতদের একাংশ স্বীকার করে নিচ্ছেন— আর বেশি দিন নয়। কারণ যে পরিমাণ অস্ত্র মজুত রয়েছে তা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান সমৃদ্ধ রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তারা।
পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ক্ষয়ক্ষতি হলেও শহরটির দখল নিতে পারা রাশিয়ার জন্য পরে লাভজনকই হবে। রাশিয়ার সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন গত শনিবার বলেছিলেন যে, তিনি তার বাহিনী ও নিয়মিত রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে নিয়ে ইউক্রেনের ছোট শহর বাখমুত দখল করতে চান কারণ। এতে একটি ‘ভূগর্ভস্থ শহর’ রয়েছে, যেখানে সেনা ও ট্যাঙ্ক নিরাপদে রাখা যাবে।
তিনি বলেন, ‘কেকের ওপর থাকা চেরি হল সোলেদার এবং বাখমুতের খনিগুলোর সিস্টেম, যা আসলে ভূগর্ভস্থ শহরগুলির একটি নেটওয়ার্ক। ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গভীরতার এসব টানেলগুলো সেনাবাহিনীর একটি বড় দলকে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। পাশাপাশি ট্যাঙ্ক এবং পদাতিক যোদ্ধা সেখান দিয়ে চলাচল করতে পারে।’
প্রিগোজিনের মতে, রাশিয়া বাখমুতের দখল নিতে পারলে তারা যুদ্ধে বিশেষ সুবিধা পাবে। সেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভূগর্ভস্থ কমপ্লেক্সে অস্ত্রের মজুত রাখা হয়েছিল। তিনি জানান, এ এলাকার বিশাল লবণ ও অন্যান্য খনির মধ্যে ১০০ মাইলেরও বেশি সংযোগ টানেল রয়েছে। এছাড়া একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ কক্ষ রয়েছে, যেখানে একসময় ফুটবল ম্যাচ ও শাস্ত্রীয় সংগীতের কনসার্টের আয়োজন করা হতো।