কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে উদ্ধার হওয়া অত্যাধুনিক গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে দায়ের করা মামলায় মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি, সশস্ত্র সংগঠনের নেতা নবী হোসেনের নামও রয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবীকে আসামি করা হয়।
রোববার (৮ জানুয়ারি) রাতে মামলা দায়েরের বিষয়টি মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী সময় সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উখিয়ার ৮-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-৩৯ ব্লকে ১০ থেকে ১২ জনের একদল দুষ্কৃতকারী এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে বেশ কিছু সময় গোলাগুলি চলে। এতে গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবীর বসতঘর থেকে একটি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। যা সোমবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে রামু সেনানিবাসের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের সদস্যরা নিষ্ক্রিয় করেন। গ্রেনেডটিতে কোন দেশের তা লেখা না থাকলেও এটি অত্যাধুনিক এবং বিদেশি বলে জানিয়েছে নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের সদস্যরা। এ ঘটনায় এপিবিএনের পক্ষে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ওই ঘটনায় আহত মোহাম্মদ নবীকে আসামি করা হয়। মোহাম্মদ নবী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওখানে চিকিৎসাধীন নবীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
‘রোববার (৮ জানুয়ারি) রাতে উখিয়া থানায় বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে করা মামলাটিতে এজাহারনামীয় আসামি ৩৩ জন এবং আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এতে প্রধান আসামী করা হয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী নবী হোসেন গ্রুপের প্রধান নবী হোসেনকে (৪৫)। তার ঠিকানা লেখা হয়েছে উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর ক্যাম্পের বি-৪১ ব্লক এবং বাবার নাম মোস্তাক আহমদ। গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবীকে ৩ নম্বর ও মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মির’ (আরসা) প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে (৪৮) ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এজাহারে জুনুনির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখা। এর আগে আরসা প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে আরও ২টি মামলায় আসামি দেখানো হয়।’
এদিকে রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, মাদক চোরাচালানকে কেন্দ্র করে আরসার সঙ্গে নবী হোসেন বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে সাড়ে ৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। একজনের নাম রশিদ আহমদ (৩৬)। তিনি উখিয়ার জামতলী ক্যাম্প-১৫ এ-৪ ব্লকের ৩৩২ নম্বর শেডের বাসিন্দা আবদুল হাকিমের ছেলে। রশিদ ক্যাম্পের ১-৪ ব্লকের হেড মাঝি ছিলেন। অপরজন মোহাম্মদ সেলিম (৩৫)। তিনি উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-৮ পশ্চিম বি-ব্লকের আবদুস সোবহানের ছেলে। তিনি ওই বি-ব্লকের সাব-মাঝি ছিলেন। এ ২ টি খুনের ঘটনায় মামলায় হয়েছে।’
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৩২টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৭ মাসে ৩২ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব খুনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের বেশিভাগ ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা (মাঝি) ও স্বেচ্ছায় পাহারারত স্বেচ্ছাসেবক।