Homeজেলালক্ষ্মীপুরের রায়পুর অংশে আঞ্চলিক সড়ক ফোরলেনের সার্ভে চলছে

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর অংশে আঞ্চলিক সড়ক ফোরলেনের সার্ভে চলছে

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, লক্ষীপুর প্রতিনিধি।।
 
২০১৮ সালে ১১৯ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত বোয়াডার- গরুহাটা সড়ক ও  টার্মিনাল – চন্দ্রগঞ্জ সড়কের বেহাল দশায় ভোগান্তি চরমে পৌছেছে। 
 
লক্ষ্মীপুর জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে  একনেকে রায়পুর-লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ৪০ কিলোমিটার যথাযথ মান ও প্রশস্ততার উন্নীতকরণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এ সড়কের উভয় পাশে শতবর্ষীসহ বিভিন্ন বয়সী ৪ হাজার ৫৮৫ টি গাছ কর্তন করা হলেও লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়নি কখনোও।
 
এ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে ৪ হাজার ৫৮৫টি বিভিন্ন বয়সী গাছ রয়েছে। উভয় প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী ‘মহাসড়কের প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার থেকে বৃদ্ধি করে ১০ দশমিক ৩ মিটার করা হয়। একই সঙ্গে সড়কের উভয় পাশে ১ মিটার করে মাটির জায়গা রাখা হয়। এতে সড়কের প্রস্থ দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৩ মিটার। সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মহাসড়কের উভয় পাশের মোট ৪ হাজার ৫৮৫টি গাছ কাটাতে হয়। 
 
তবে নির্মাণের কয়েক মাস পর থেকেই অনিয়মের অভিযোগ উঠে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানদের বিরুদ্ধে জনগনের। ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কে ৬ মাস না যেতেই বিভিন্নস্থানে ফাটল দেখা দিয়েছিলো। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। জেলার চন্দ্রগঞ্জ থেকে ইটের পোল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে সরকার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পায় রানা বিল্ডার্স ও আবদুল মোমেন যৌথভাবে। জোড়াতালি দিয়ে প্রকল্পটির উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হলেও ৬ মাসের মধ্যেই সড়কের দু’পাশে অসংখ্য গর্ত ও একাধিকস্থানে ফাটল দেখা দিলেও তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি । ফলে ক্রুটিপূর্ণ সড়কের কারণে শুরু থেকে অদ্যাবধি লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও ঠিকাদার দায়সারাভাবে কাজ শেষ করার কয়েকমাসের মধ্যেই রাস্তাটির এমন বেহালদশা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
 
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের লক্ষ্মীপুর অংশের ৪০ কিলোমিটার উন্নয়নে দুটি প্রকল্পে ১১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। পরবর্তীতে আরো কিছু অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলো।  এর মধ্যে চন্দ্রগঞ্জ এলাকা থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ইটের পোল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের বরাদ্দ ৬৬ কোটি টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করে রানা বিল্ডার্স ও আবদুল মোমেন জয়েন্ট ভেঞ্চার।
 
অন্য আরেকটি প্রকল্পে ইটের পোল থেকে রায়পুর বর্ডার বাজার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নে ৫৩ কোটি টাকার কাজ পায় রানা বিল্ডার্স, হাসান বিল্ডার্স ও সালেহ আহমদ বাবুল জয়েন্ট ভেঞ্চার। ওই প্রকল্পের কাজ শতভাগ ভালো না হলেও তুলনামূলকভাবে দালাল বাজারের পর থেকে মেইলগেট পর্যন্ত মানসম্মত কাজ হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। তবে রাখালিয়া থেকে বোয়াডার এবং দালাল বাজার থেকে গরুহাটা সড়কের মান ছিলো নিম্নমানের। 
 
প্রকল্প দুটিতে উল্লেখিত নিয়মানুযায়ী ৩ ফুট করে দু’পাশে ৬ ফুট মূল সড়ক প্রশ্বস্ত করার পর দু’পাশে আরো ৬ ফুট ফুটপাথ নির্মাণ করার কথা ছিলো। একই সঙ্গে যথাযথ মান রক্ষা করে সড়কের উপর দুই ধাপে ১২০ মিলিমিটার পিচঢালাই (লেয়ার) দেয়ার কথা ছিলো। অথচ ফুটপাত নির্মাণেও করা হয়েছে বড় ধরণের শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়েছিলো সেই সময়ে। আগের রাস্তা থেকে ভেকো দিয়ে উল্টানো পুরনো পিচঢালাই ফেলে ফুটপাত নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছিলো।
 
অপরদিকে লক্ষ্মীপুর টার্মিনাল থেকে  চন্দ্রগঞ্জ  ইটের পোল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় রাস্তার বিভিন্নস্থানে পিচঢালাই ফুলে ফেটে গেছে এবং কোথাও কোথাও রাস্তা দেবে গেছে। মাঝে মাঝে সড়ক বিভাগের লোকজন এসে ফুলা অংশ তুলে ফেলছেন এবং পুনরায় পিচঢালাই দিয়ে মেরামত করছেন। তাও মানসম্মতভাবে করা হচ্ছে না। পুনরায় এসব কাজ করা হলেও ওইসব স্থানে সমতলভাবে ফিনিশিং না দেওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে বাড়ছে একেরপর এক সড়ক দুর্ঘটনা।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা মৎস অফিসের সামনে, মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া, হাজিরপাড়ার বটতলী, চন্দ্রগঞ্জে কলেজ গেইটসহ বিভিন্নস্থানে সড়কে ফাটল, দেবে যাওয়া ও রাস্তার পাশে গর্ত দেখা দিয়েছে।
 
স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ চৌমুহনী-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট বড় যানবাহন চলাচল করে মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত এ সড়কে। ফলে সড়কটিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। যার কারণে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ওঠে। পরে ২০১৭ সালের শেষ দিকে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুটে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাস্তার দু’পাশের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
 
জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম মুঠো ফোনে জানান, লক্ষ্মীপুর টার্মিনাল থেকে চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত ফোর লেন সড়ক নীতিগত সিদ্ধান্ত, সার্ভে সহ আনুসাঙ্গিক পরিকল্পনা কমিশন থেকে একনেকে পাঠানো হয়েছে। একনেকের মিটিংয়ে উঠলেই ফোর লেন সড়কের যাত্রা শুরু হবে। 
 
লক্ষ্মীপুর -২ আসনের সংসদ সদস্য এড.নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি মুঠোফোনে জানান, লক্ষ্মীপুর টার্মিনাল থেকে রায়পুর বোর্ডার বাজার পর্যন্ত একটি ডিও প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বর্তমানে সড়কটির সার্ভে চলছে। সার্ভে শেষ হলেই এটি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে সেখান থেকে একনেকে উঠবে। ফোরলেন সড়কের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। 

সর্বশেষ খবর