নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী জানুয়ারিতে ফাইনাল খেলা হবে।
রোববার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টি-জেপি’র ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগে টানা তিনবার কেউ সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। ওপরে আল্লাহ আর নিচে শেখ হাসিনার কল্যাণে।
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচাতে হলে দেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এ নেতা।
রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের দূরত্ব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্কটা এমন দেশে শেখ হাসিনা একদিনে ১০০ সেতুর উদ্বোধন করেছেন, কিন্তু রাজনীতিতে আমরা কোনো সেতু নির্মাণ করতে পারিনি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। রাজনৈতিক কর্মসম্পর্কটা আমাদের মধ্যে থাকা উচিত ছিল, তা না হলে গণতন্ত্র বাঁচতে পারে না। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা দরকার। আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আমরা নষ্ট রাজনীতির কাছে অনেকেই বারে বারে আত্মসমপর্ণ করি। নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষের জন্ম দেয়। নষ্ট রাজনীতিবিদ জন্ম দেয় নষ্ট রাজনীতি, নষ্ট রাজনীতিকরা নষ্ট রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখে। বাংলাদেশের অবস্থা হয়েছে ঠিক তাই। এজন্য তো আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল যে বাংলাদেশ, আজকে সেই বাংলাদেশ কি আমরা রাখতে পেরেছি? কোথায় পাব,’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসতে চায় না। আমরা রাজনীতিকরা তাদের জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ করতে পারিনি। যে কারণে ভালো মানুষ, শিক্ষিত, সৎ, চরিত্রবান মানুষ রাজনীতির ধারে কাছেও নেই। আমরা যারা রাজনীতি করি এ ব্যর্থতার দায় আমাদের। একই অবস্থা ছাত্ররাজনীতিতেও। চরিত্রবানদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে, তা না হলে রাজনীতি খারাপ হয়ে যাবে। নেতাদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে, না হলে রাজনীতি নেতা শূন্য হয়ে যাবে। এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, ‘একই অবস্থা আমাদের ছাত্র রাজনীতিতে। ছাত্র রাজনীতি সুনামের ধারায় আসতে পারেনি, যে সুনামের ধারায় আমাদের নেতারা ছাত্র রাজনীতি করেছেন। সেই ধারাটি আজ কোথায় হারিয়ে গেছে। খারাপ লোকের হাতে রাজনীতি থাকলে দেশ খারাপ হয়ে যাবে; খারাপ লোকেরা মন্ত্রী, এমপি হবে, দেশ চালাবে। এতে দেশের ভালো হবে না।’
ভালো লোকদের রাজনীতিতে আনতে হবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
শরিক দলকে মান-অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে। নেপোলিয়ান বলেছিলেন, আমরা বিজয়ী হয়েছি কিন্তু বিজয়কে সংহত করতে পারিনি। আমাদের বিজয়ও সুসংহত নয়। বিজয়কে সুসংহত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভুল-ত্রুটি আমাদের সবার আছে কিন্তু তারপরও এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন-অর্জনকে বাঁচাতে হলে ক্ষমতার মঞ্চে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। এটা হলো বাস্তবতা।’
খেলা হবে প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের যা বলেন:
খেলা হবে একটি পলিটিক্যাল হিউমার মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেকে বাঁকাভাবে দেখে। আমি যেখানেই যাই, ছোট ছোট বাচ্চারা ফুল বিক্রি করে তারা গাড়ি দেখলেই বলে খেলা হবে। এটা আসলে একটি পলিটিক্যাল হিউমার। উইকিপিডিয়াতেও এটা অন্তর্ভুক্ত আছে। এটা খারাপভাবে নিলে খারাপ।
‘পশ্চিমবঙ্গে গত নির্বাচনের পুরোটায় একটা স্লোগান ছিল। যে স্লোগান মমতা ব্যানার্জি শুরু করেছিলেন, একই স্লোগান নরেন্দ্র মোদি কাউন্টার করেছিলেন। ১৩০ কোটি লোকের দেশ ভারত। সেখানে এত পত্রিকা, মিডিয়া, কেউ কিন্তু এটাকে নিয়ে কটাক্ষ করেনি। যাক, আমাদের দেশে হয়তো অনেকে ভুল বুঝেছেন। আমি জনগণকে আকৃষ্ট করতে স্লোগান দিচ্ছি। জনগণ গ্রহণ করেছে, সেই স্লোগান দিতে আমার অসুবিধা কোথায়! খেলা হবে। আন্দোলনেও হবে, নির্বাচনেও হবে,’ বলেন কাদের।
নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। আগামী জানুয়ারিতে ফাইনাল খেলা হবে, ফাইনাল খেলা হবে।’
এ সময় জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে ১৪ দলের জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ওয়ার্কাস পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক পাটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।