চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। বছরের শুরুতে টানেল চালু করতে যানবাহনের টোল হারও চূড়ান্ত করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলে এটি কার্যকর করা হবে। তবে কর্ণফুলী নদীর টানেলের পাশেই শাহ আমানত সেতু থাকায় টোল হার নির্ধারণে কিছুটা জটিলতায় পড়েছে সেতু বিভাগ।
শাহ আমানত সেতুতে প্রাইভেটকার ও জিপের টোল দিতে হয় ৭৫ টাকা। টানেল দিয়ে চলতে হলে একই গাড়িকে গুনতে হবে ২০০ টাকা। এভাবে প্রত্যেক গাড়ির টোল শাহ আমানত সেতু থেকে টানেলে আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি ধরা হয়েছে। এতে টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচলে নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করছেন চালকরা।
টোল হারের সর্বশেষ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পিকআপভ্যানের জন্য শাহ আমানত সেতুতে টোল আগে ১৩০ টাকা হলেও নতুন করে টোল নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সেখানে পিকআপভ্যানের জন্য টানেলে টোল ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। এ ছাড়া মাইক্রোবাস শাহ আমানত সেতুতে ১০০ টাকার বিপরীতে বঙ্গবন্ধু টানেলে ২৫০ টাকা, বাস ৫০ টাকার বিপরীতে টানেলে ছয়গুণ বাড়িয়ে ৩০০ টাকা, বাস (৩২ আসনের বেশি) শাহ আমানতে ১৫৫ টাকার বিপরীতে টানেলে ৪০০ টাকা এবং বাস (৩ এক্সেল) শাহ আমানতে টোল নতুন নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তবে বঙ্গবন্ধু টানেলের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
এ ছাড়া ভারী যানবাহন ট্রাক (৫ টন) শাহ আমানতে ১৩০ টাকার বিপরীতে টানেলে ৪০০ টাকা, ট্রাক (৫.০১ থেকে ৮ টন পর্যন্ত) শাহ আমানতে ২০০ টাকার বিপরীতে টানেলের জন্য ৫০০ টাকা, ট্রাক (৮.০১ থেকে ১১ টন পর্যন্ত) শাহ আমানত সেতুতে ৩০০ টাকার বিপরীতে টানেলের জন্য ৬০০ টাকা, ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) শাহ আমানত সেতুর জন্য নতুনভাবে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে টোল নির্ধারণের জন্য, আর টানেলের জন্য টোল হার ধরা হয়েছে ৮০০ টাকা। এ ছাড়া ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) শাহ আমানতে ৭৫০ টাকা টোলের বিপরীতে বঙ্গবন্ধু টানেলে এক হাজার টাকা করা হয়েছে এবং ট্রেইলার (৪ এক্সেলের অধিক) শাহ আমানতে চলাচলের জন্য নতুনভাবে টোল হার নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ভারী যানবাহনটির জন্য বঙ্গবন্ধু টানেলে টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছে এক হাজার টাকা, সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা ধরে মোট ১২ ধরনের যানবাহনের জন্য টোল হার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
টোল প্রস্তাবনায় নিরাপত্তার কারণে বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার চালানোর কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।
অতিরিক্ত নয়, শাহ আমানত সেতুর সঙ্গে সমন্বয় করে টানেলের টোল সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান।
প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নভেম্বরে শেষ হয় টানেলের সিভিল অংশের কাজ। এখন চলছে টানেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ইলেক্ট্রোমেকানিক্যালের কাজ। চলমান কাজ শেষ করতে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশে বলা হয়েছে, টানেল চালু হওয়ার পর ২০২৫ সালে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালে যানবাহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ৬২ হাজার। টানেলের পাশাপাশি প্রশস্ত ও সুবিধাজনক স্থানে কম টোল হারের সেতু থাকায় টানেলের ব্যবহার নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে সেতু বিভাগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দৈর্ঘ্য তিন দশমিক তিন দুই কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য দুই দশমিক চার পাঁচ কিলোমিটার। বর্তমানে কর্ণফুলী টানেলের সংশোধিত নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। নতুন করে ৭০০ কোটি টাকা বেড়ে টানেলের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পের প্রথম ডিপিপি প্রণয়নকালে খরচ ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।